Showing posts with label যে গল্পে হৃদয় গলে. Show all posts
Showing posts with label যে গল্পে হৃদয় গলে. Show all posts

Thursday, 12 April 2012

মেম সাহেব!

                                   بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم




তৎকালীন কায়রোর আমীর ছিলেন জনাব সুজাউদ্দীন। তিনি বলেন, একদিন আমি এক লোকের কাছে বসা ছিলাম। তখন তার বয়স বেশ হয়ে গেছে। গায়ের রং তামাটে বর্ণের। ঠিক সেই মুহূর্তে কয়েকটি ছেলে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ওরা ছিল ছড়ানো মুক্তার মতোই সুন্দর। গায়ের রঙ ছিল ধবধবে সাদা।
আমি লোকটির কাছে জানতে চাইলাম, ওরা কারা?
সে বলল, ওরা আমারই সন্তান।
আমি বললাম, এ এলাকার ছেলেরা তো এমন ধবধবে সাদা হয় না। ওরা এমন সাদা হলো কেমন করে?
জবাবে সে বলল, ওদের মা আসলে ইংরেজ। ওরা মায়ের রং পেয়েছে।
ইংরেজ মহিলা আপনার স্ত্রী! কথাটা বিস্ময়ভরা কণ্ঠেই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো।
হ্যাঁ, ইংরেজ মহিলা আমার স্ত্রী! তবে তার সাথে আমার জীবন জড়ানোর এক চমকপ্রদ কাহিনী আছে!
আমি কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। কাহিনীটা শুনতে চাইলাম। সে তার কাহিনী বলা শুরু করল এভাবে-
আমার যৌবনের যখন ষোলকলা পূর্ণ হলো তখন আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গেলাম। সে সময় সিরিয়ায় চলছিল ফিরিঙ্গিদের দখলদারিত্ব। সেখানে গিয়ে আমি ভাড়ায় একটা দোকান খুলে বসলাম। আমার ব্যবসা ছিল কাতান বস্ত্রের।
একদিন আমি দোকানে বসে আছি। এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করলেন এক ইংরেজ মহিলা। তিনি ছিলেন এক নেতৃস্থানীয় ক্রুসেডার-পত্মী। আমি তার রূপ-লাবণ্য দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। তাই তার কাছে যা বিক্রি করলাম, অনেক কম দামে বিক্রি করলাম। তিনি চলে গেলেন।
কয়েক দিন পর আবার এলেন। আবারও তাকে আমি ভীষণ খাতির করলাম। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতই আমার দোকানে যাতায়াত করতে লাগলেন।
আমি দিল খুলে তাকে গ্রহণ করতাম। সুন্দর-সুমধুর আচরণ করতাম। আর অন্যদের তুলনায় অনেক কম দামে তার কাছে পণ্য বিক্রি করতাম।
এভাবে সামনে চলতে চলতে আবিস্কার করলাম যে, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার এই ভালোবাসায় যখন প্লাবন সৃষ্টি হলো, নিয়ন্ত্রণের বাঁধ তখন ভেঙ্গে গেল। আমি আর নীরব থাকতে পারলাম না। অনুভব করলাম, আমার ভেতরে যেন একটা বৃক্ষ জন্ম নিয়েছে। কচি কচি সবুজ পাতায় তা ছেয়ে গেছে। সেখানে ছোট ছোট কলিরা চোখ মেলার অপো করছে। আমাকে নিয়ে আমার ভেতরে কিসের যেন একটা আয়োজন চলছে। আমি তখন মনপ্রাণ দিয়ে তার একান্ত সান্নিধ্য কামনা করতে লাগলাম!
অনিন্দ্য সুন্দরী এই ইংরেজ মেম কখনোই একা আসতেন না। সঙ্গে আসত এক বৃদ্ধা। একদিন অধৈর্য হয়ে মনের কথাটা বৃদ্ধার কানে বলেই ফেললাম, আমি মেম সাহেবকে ভালোবেসে ফেলেছি! সামনে বাড়তে চাই! তুমি পথ বলে দাও! দেবে?
বৃদ্ধা বিস্মিত হলো। চোখ উল্টে আমার দিকে তাকাল। আর বলল, উনি তো এক সেনাপতির স্ত্রী! তোমার ভালোবাসার কথা সেনাপতি জানতে পারলে শুধু তোমাকে নয় আমাদেরকেও আস্ত রাখবেন না!
কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। বুড়িকে রাজি করাতে সর্বাÍক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
এক সময় বুড়ি ফোকলা মুখে হাসল! আমার কাছে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা দাবি করল। বলল, মেম সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। তাকে পেতে হলে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে।
আমি অনেক কষ্টে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করলাম এবং বুড়ির হাতে গুজে দিলাম।
বুড়ি স্বর্ণমুদ্রাগুলো গ্রহণ করল এবং কোন্ রাতে মেম সাহেবকে আমার বাড়ীতে পাঠাবে তাও বলে দিল।
যে রাতে মেম সাহেবের আসার কথা সে রাত শুরু হতেই আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপোর প্রহর গুনতে লাগলাম।
অবশেষে অপোর পালা শেষ হলো। মেম সাহেব এলেন। সাজগুজ করে আরো আকর্ষণীয় হয়ে এলেন!
কুশল বিনিময়ের পর আমরা একসঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম।
ইতোমধ্যে রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল। আমার ঘরে আমি ও মেম সাহেব ছাড়া আর কেউ নেই। বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে দেখে মনে মনে বেশ পুলক অনুভব করলাম!
মেম সাহেব নিজকে আমার মধ্যে হারিয়ে ফেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রস্তুত আমিও। ঠিক এমন সময় আমার মনে বিবেকের বাধা অনুভব করলাম। আমার ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হলো। বিবেক যেন আমাকে বলল,
তুমি কি আল্লাহকে ভয় পাও না? এক পরনারীর দিকে এমন নির্লজ্জভাবে হাত বাড়াতে তোমার কি একটু বাধছেও না? যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, যে আল্লাহ তোমাকে সুস্থ রেখেছেন, যে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া একটি মুহূর্তও কাটানো তোমার পক্ষে সম্ভব নয়; সে আল্লাহর নাফরমানি করছ? তাও এক খৃস্টান নারীর প্রেমে পড়ে?
বিবেকের চোখ-রাঙানিতে আমার প্রেম-তরীটা সম্পূর্ণ উল্টে গেল। ফলে মেম সাহেবকে ঘাটে ভিড়ানো আর সম্ভব হলো না। সম্ভব হলো না তাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করার! সম্ভব হলো না তার গায়ে হাত দেয়ার!
আমি আকাশের দিকে তাকালাম। তখন চোখটা একটু ভিজা। মনটা বেশ নরম। মনো হলো, আল্লাহ যেন আকাশ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, মালিক আমার! আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, এই খৃস্টান নারীর সাথে আমি কোনো অসংলগ্ন আচরণ করব না! কেননা আমি তোমাকে ভয় পাই। তোমাকে লজ্জা পাই! তোমার শাস্তিকে ভয় করি!
এরপর আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম। চলে গেলাম অন্য কামরায়। যাওয়ার সময় বলে গেলাম, আপনি চলে যান। আপনার সাথে কোনো অসৎ কর্মে লিপ্ত হওয়া আমার পে সম্ভব নয়। কেননা আমি আমার মাওলা আল্লাহ পাককে ভয় করি। ভয় করি তার কঠিন শাস্তিকে।
মেম সাহেব আমার এই আচরণ ও ভাবান্তর দেখে বিস্মিত হলেন। তারপর আমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন।
সকালে যথারীতি আমি দোকানে গেলাম। বেলা কিছুটা গড়িয়ে যেতেই দেখলাম, মেম সাহেব আমার দোকানের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। চেহারায় প্রচণ্ড েক্ষােভ ও অসন্তুষ্টির ছাপ। মেম সাহেবের রূপের কথা না বলে পারছি না! যেনো এক টুকরো চাঁদ আকাশ থেকে নেমে এসেছে! ওকে দেখে আমার মনে নতুন করে ভালোবাসার চারা অঙ্কুরিত হলো। এবং আশ্চর্য! অল্প সময়ের মধ্যেই সেই চারাটা বিশাল বৃেক্ষ পরিণত হলো। সেই সাথে তা ছায়া দিয়ে আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। আমি আবারও কাবু হয়ে গেলাম! মনকে বললাম বরং শয়তান আমাকে দিয়ে বলাল,
কে তুমি? এতো সাধু হয়ে গেলে যে! এ চন্দ্রমুখীর চন্দ্র-সৌন্দর্য এড়িয়ে যাওয়ার মানে কি? তুমি কি খলীফা আবু বকর? উমর? নাকি বনে গেছ মহা সাধক জুনাইদ বোগদাদী? কিংবা মহা তাপস হাসান বসরী?
তার জন্য আমার মনটা ভীষণ তোলপাড় করতে লাগল। ও যখন আমাকে অতিক্রম করে চলে গেল, আমি তখন ছুটে গিয়ে সেই বুড়িকে ধরলাম। আবার অনুরোধ করলাম-
আজ রাতে আবার তাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে এসো!
সে ঠোঁট উল্টে বলল, তাকে আবার পেতে হলে একশ দিনার গুণতে হবে!
আমি আবার দীনার সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং সফল হলাম। তাকে দিয়েও দিলাম।
এল রাত। দ্বিতীয় রাত। চলল অপো। অনেকক্ষণ পর মেম সাহেবের শুভাগমনে (?) অপোর পালা শেষ হলো। তাকিয়ে দেখলাম, সত্যিই যেন আমার বাড়িতে আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে! চাঁদের বুকে তো একটা কালিমা আছে; কিন্তু তার চেহারায় শুধু রূপ ঝরানো লালিমা!
আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। কিন্তু তার পাশে বসতেই আল্লাহর ভয় এসে আমার ঘুমন্ত বিবেককে আবার জাগিয়ে তুলল। বিবেক যেন চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
ছি! এমন দুঃসাহস কী করে হলো তোমার? তুমি কি তাহলে এক খৃস্টান ললনার জন্য বিলিয়ে দেবে নিজের দীন ও ঈমান?! তুমি না আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলে, এই মহিলার সাথে কোনো অশালীন আচরণ করবে না! তাহলে কেন তাকে আবার নিয়ে এসেছ? কেন তার দিকে আবার হাত প্রসারিত করতে চাচ্ছ! তবে কি তুমি আল্লাহ পাকের কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা ভুলে গেছ। ভুলে গেছ, জাহান্নামের দাউ দাউ করা লেলিহান অগ্নিশিখার কথা! ভুলে গেছ বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কথা! আফসোস! তোমার জন্য শত আফসোস! কীভাবে তুমি ভুলে গেলে ওয়াদা ও শাস্তির কথা!! কিভাবে তুমি লিপ্ত হতে যাচ্ছ আল্লাহর নাফরমানীতে!!!
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাই আগের মতোই তাকে চলে যাওয়ার কথা বলে অন্য কামরায় চলে গেলাম!
সকালে দোকানে গেলাম। হৃদয় জুড়ে বিরাজ করছিল- মেম-চিন্তা। বেলা বাড়তেই তার দেখা পেলাম। আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে আগের মতোই ক্ষদ্ধ ভঙ্গিতে। তাকে দেখামাত্রই সেদিনের মতো আজো প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হলাম। তাকে রাতের বেলা হাতের কাছে পেয়েও হারানোর বেদনায় আপে করতে লাগলাম। নিজেকে তিরস্কার করতে লাগলাম। আক্ষেেপ আক্ষেেপ কেটে গেল কিছু বেলা। বেশিক্ষণ সইতে পারলাম না। হৃদয়ে পুনরায় জেগে উঠল প্রেমের দহন জ্বালা! আবার হাজির হলাম বুড়ির কাছে!
বুড়ি এবার ভীষণ চটা! রাগে ফেটে পড়ার উপক্রম!! আমি অনুনয়-বিনয় করলে সে বলল,
পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রার থলে ছাড়া ওকে পাওয়া সম্ভব নয়!
পাচঁশত স্বর্ণমুদ্রার থলে!! আমি যে একেবারে ফতুর হয়ে যাবো! তবুও বললাম,
তাই হবে। তাই দেব! তবুও তুমি ব্যবস্থা করো!
আমি দোকানটা বিক্রি করে পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা তার জন্য আলাদা করে রাখলাম। এ সময় আমার বিবেক তৃতীয় বারের মতো আমাকে আবার ধমকাল। আবার শাসাল। আবারও সেই কথাগুলো বলল যা বলেছিলÑ আগের দু'রাতে।
অবশেষে মনের সাথে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করে আল্লাহর ভয়ে যখন আমি এই অপকর্ম থেকে বিরত থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, ঠিক তখনি আমার কানে একটা ঘোষণা এলো। এক খৃস্টান ঘোষক বলছিল,
হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের সাথে আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ। তাই এখানকার মুসলিম ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ করে বলছি, তোমরা এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাও।
এই ঘোষণা ছিল আমার জন্য মহা এক বিপদ, বিশাল এক ঝড়। কিন্তু স্বীয় চরিত্র সংরণের উপায় হিসেবে এই বিপদ ও ঝড়কে আমি স্বাগত জানালাম এবং মাল-পত্র গুছিয়ে তিন দিনের মাথায় সিরিয়া ত্যাগ করলাম!

যদিও সিরিয়াকে ‘বিদায়' বলতে অনেক কষ্ট হলো; তথাপি এই বিদায়কে আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট এক নেয়ামতই মনে করলাম।
দেশে ফিরে আমি বাঁদীর ব্যবসা শুরু করলাম। এর ভেতর দিয়ে আমি মেম সাহেবকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলাম। এভাবে কেটে গেল তিনটি বছর। তারপর সংঘটিত হলো হিত্তিন যুদ্ধ। মুসলমানরা ফিরে পেল উপকূলীয় শহরগুলো। বিজয়ী বাদশাহের জন্য বাঁদী তলব করা হলো আমার কাছে। একশত দীনারের বিনিময়ে আমি এক অপরূপা বাঁদীকে তার হাতে তুলে দিলাম। আমাকে নব্বই দিনার পরিশোধ করা হলো। বাকি রাখা হলো দশ দিনার।
দশ দিনার কম কেন? জানতে চাইলে বাদশাহ আমার দিকে ইশারা করে এক লোককে বললেন,
একে নিয়ে চলো আমাদের সাথে। যেখানে আমরা খৃস্টান মহিলাদের বন্দী করে রেখেছি সেখানে। ও ওর বাকী দশ দিনারের পরিবর্তে ইচ্ছামতো সেখান থেকে একটা খৃস্টান বাঁদী বেছে নিবে!
আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেই গৃহে। ঢুকতেই দেখলাম, হায়! এ যে আমার হারানো মেম! তিনি বন্দিনী!! তিনি আমাকে চিনলেন না। কিন্তু আমি তাকে চিনলাম। আমি দশ দিনারের বিনিময়ে তাকেই বেছে নিলাম। মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর ভয়ে যাকে আমি হাতের মুঠোয় পেয়েও পরিত্যাগ করেছিলাম, যার এক রাতের সান্নিধ্য লাভের জন্য পাঁচশত দিনার পর্যন্ত দিতে রাযী হয়েছিলাম, আল্লাহ পাক দয়া করে সেই মেম সাহেবকে আজীবনের জন্য আমার মালিকানায় দিয়ে দিলেন মাত্র দশ দিনারের বিনিময়ে! হে আল্লাহ! তুমি বড়ই দয়াময়। তোমার ভয়ে তোমার নাফরমানী কেউ থেকে বিরত থাকলে তুমি তাকে উত্তম বদলা দাও। হে পরাক্রমশালী খোদা! আমি তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ!
যাহোক, মেম সাহেবের পূর্ণ মালিক হয়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে চেনেন?
জবাবে তিনি বললেন, না।
আমি আপনার সেই কাতান ব্যবসায়ী! যার কাছ থেকে আপনি দু'বারে একশ বিশ দীনার নিয়েছিলেন। তৃতীয়বার বলেছিলেন, আমাকে পেতে হলে পাঁচশত দিনার দিতে হবে! এই যে আমি আজ মাত্র দশ দীনারে আপনার মালিক হয়ে গেলাম!!
আমার কথা যখন শেষ হলো, তখন দেখলাম, তার দৃষ্টি ঝাপসা। ঠোঁট দু'টি কাঁপছে। আমি বললাম, আপনি কি কিছু বলবেন?
তিনি বললেন, আমি বিস্মিত হচ্ছি একথা ভেবে যে, আল্লাহর ভয়ে আমার সাথে অবৈধ কর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে তিনি কীভাবে আপনার খেদমতে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন! যে আল্লাহ এতবড় মেহেরবান, এতবড় দয়ালু আমি তার উপর এক্ষুণি ঈমান এনে ইসলাম ধর্ম কবুল করতে চাই। এই বলে তিনি উচ্চ কণ্ঠে পড়তে লাগলেন- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
আমার মেম সাহেব মুসলমান হয়ে যাওয়ার পর আমরা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম।
কিছুদিন যেতেই তার মা একটা ছোট্ট বাক্স পাঠালেন। তাতে দুটি থলে পাওয়া গেল। একটিতে পঞ্চাশ দিনার অপরটিতে একশত দিনার। কুদরতের কারিশমায় আমি মনে মনে হাসলাম। বুঝলাম, সব হয়েছে তাঁরই ইশারায়। সবই ফেরত পেয়েছি তাঁরই ইশারায়। মজার ব্যাপার হলো, যে দু'টি সুন্দর জামা পড়ে মেম সাহেব দু'রাতে আমার কাছে এসেছিলেন, ছোট্ট এই বাক্সে সেই জামা দুটোও ছিল।
হ্যাঁ ভাই! তোমাকে আমি অনেক লম্বা কাহিনী শুনিয়ে ফেললাম। আমার আশেপাশের এই ছেলেগুলো মেম সাহেবেরই সন্তান!
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! উপরোক্ত ঘটনায় দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গেল যে, বান্দা যদি আল্লাহর জন্য কোনো নাফরমানী তরক করে, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে অবশ্যই এর বদলা দেন। উত্তম বিনিময় দান করেন। লোকটি আল্লাহর ভয়ে মেম সাহেবকে গভীরভাবে ভালোবেসেও আপন চরিত্রকে কুলষিত হতে দেয়নি। তাই আল্লাহ পাক তাকে উত্তম বদলা দিয়েছেন। [সূত্র : মাতালিয়ুর বুদূর, আল্লামা দামেশকী রহ.]





   যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

আখলাকে নববী

                                   بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم




ইহুদিদের বড় পণ্ডিত যায়েদ ইবনে সুনা। একদা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ থেকে কিছু গম খরিদ করতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি ছয় মাস পর গমের বিনিময়ে তোমাকে এই পরিমাণ খেজুর দিব, এর আগে নয়। পণ্ডিত তাতে সম্মত হয়। 
ইহুদি পণ্ডিত নির্ধারিত গম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রদান করল। ওয়াদা করল, ছয় মাস পর এসে গমের বিনিময়ে খেজুর নিয়ে যাবে। এর একদিন আগেও নয়।
কিন্তু কী আশ্চর্য! তিনদিন যেতে না যেতেই পণ্ডিত এসে হাজির। এসেই নবীজিকে বলল, আমার ঋণ পরিশোধ করুন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে পারতেন, ভাই! আমাদের এই লেনদেনের মেয়াদ তো ছয়মাসের। তুমি তো বলেছিলে, ছয় মাস পর এসে গমের বিনিময়ে খেজুর নিয়ে যাবে। অথচ তিনদিন যেতে না যেতেই পাওনা নিতে হাজির হয়ে গেলে? এটা কেমন কথা!!
কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা না বলে, আইনের পথে না গিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বললেন, ভাই! এখন তো আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। 
সে বলল, এসব বুঝি না। এক্ষুণি আমার পাওনা পরিশোধ করুন। 
এবারও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নম্রভাবে কোমল কণ্ঠেই বললেন, ভাই! আমার কাছে কিছু থাকলে তো দিব।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয়বারও এটা বলেননি যে, ওরে কমবখত! ওরে নালায়েক!! তুমি ওয়াদা ভঙ্গ করেছ। চুক্তি অমান্য করেছ। কারণ চুক্তি ছিল, ছয় মাস পর এসে আমার কাছ থেকে তুমি পাওনা নিয়ে যাবে। অথচ তুমি তিন দিনের মাথায় এসে হাজির। নবীজি আইনের পথে না চলে খুলুকে আযীম তথা মহা চারিত্রিক গুণাবলীর পথ অনুসরণ করলেন। ভদ্রতার সাথে বললেন, ভাই আমার কাছে কিছুই নেই। ব্যবস্থা হলে দিব। 
ইহুদি এবার কঠোর আচরণ শুরু করল। সে বলল, ঋণ নিয়ে টালবাহানা করা, এ শুধু তোমারই নয়; তোমার পুরো বংশের অভ্যাস! ঋণ আদায়ের ব্যাপারে তোমার বংশের কেউ-ই আন্তরিক নয়!!
যায়েদ ইবনে সুনা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ধরনের আরো অনেক কটুকথা বলল।
হযরত উমর রাযি. সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ইহুদির এহেন অশোভনীয় আচরণ দেখে তিনি রাগে ফেটে পড়ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে সামলাতে না পেরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করে বসলেন। বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন। আমি এই কাফেরের গর্দান উড়িয়ে দিই। আপনার সাথে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ কিছুতেই আমি বরদাশ্ত করতে পারছি না। 
বিস্ময়ের কথা হলো, আল্লাহর রাসূল ইহুদি পণ্ডিতের উপর রাগ না করে উল্টো হযরত উমর রাযি. এর প্রতি অসন্তুষ্টির ভাব প্রকাশ করলেন। বললেন, হে উমর! আমি কিছুতেই আশা করিনি যে, তুমি এমন কথা বলবে। আমি তো তোমার কাছে এ আশা করেছিলাম যে, তুমি আমাকে বোঝাবে।
হে উমর! মানুষের পাওনা সঠিকভাবে পরিশোধ করার ব্যাপারে সত্যিই এ মুহূর্তে আমি তোমার নসিহতের প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু আশ্চর্য! এটা না করে তুমি আমার পাওনাদারকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হয়ে গেলে! তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়ার জন্য অনুমতি চাইতে লাগলে!! উমর! সে তো তার পাওনা চাইতে এসেছে। আর তুমি কিনা তাকে তার পাওনা চাইতে বারণ করছ!
হযরত উমর রাযি. দারুণ লজ্জিত হলেন। বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার কটুকথা সহ্য হচ্ছিল না, তাই বলেছি। আচ্ছা, আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার সমুদয় পাওনা পরিশোধ করে দেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, আমি অনুমতি দিলাম। তবে গমের বিনিময়ে যতটুকু খেজুর সে পাবে, তার চেয়েও কিছু খেজুর বেশী দেবে। কেননা আমরা তাকে পেরেশান করেছি। কষ্ট দিয়েছি। সে তার পাওনা চাইতে এসেছে। কিন্তু আমরা সাথে সাথে তা পরিশোধ করিনি।
হযরত উমর রাযি. ইহুদিকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। নির্ধারিত পাওনা মিটিয়ে অতিরিক্ত খেজুর দিয়ে তাকে খুশি করলেন। তারপর তার প্রতি গভীরভাবে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি ইহুদি পন্ডিত যায়েদ ইবনে সুনা?
ইহুদি বলল, হ্যাঁ!
হযরত উমর রাযি. বললেন, পণ্ডিতজী! আল্লাহর রাসূলের সাথে এহেন অশোভনীয় আচরণ করার কী প্রয়োজন ছিল?
সে বলল, আমি ইচ্ছা করেই এমনটি করেছি। তুমি হয়তো প্রশ্ন করতে পার, কেন আমি এমন ইচ্ছা করলাম, তাই না? তবে শোন- এরূপ ইচ্ছা করার কারণ হলো, আমি তাওরাত কিতাবে আখেরী নবীর সকল নিদর্শন এবং স্বভাব-চরিত্র অধ্যায়ন করেছি এবং সবগুলোই পরীক্ষা করে দেখেছি। তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, তিনিই তাওরাতে বর্ণিত প্রতিশ্র“ত শেষ নবী। তবে তাঁর একটি গুণ সর্ম্পকে যাচাই করা বাকি ছিল। সেটি হলো তাঁর সামনে যে যত বেশী অসদাচরণ করবে তিনি ততবেশী দয়ার আচরণ করবেন। তাই আমি এ গুণটি পরীক্ষা করার জন্য ইচ্ছে করেই এমন আচরণ করেছি।
আমি খোদার কসম করে বলছি, তিনিই তাওরাতে বর্ণিত প্রতিশ্র“ত শেষ নবী। আমি তাঁর সাথে সীমাহীন বেয়াদবি করেছি। কিন্তু তিনি আমার সাথে বিনম্র আচরণ করেছেন। প্রতিশোধগ্রহণমূলক কোনো আচরণই তিনি করেননি। আমার পরীক্ষা সফল হয়েছে। তাই আমি ঘোষণা দিচ্ছি--“আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু”। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। 
আমি মুসলমান হয়ে গেলাম ও আমার অঢেল সম্পদ ইসলামের জন্য ওয়াক্ফ করে দিলাম।  
প্রিয় পাঠক! কী সহনশীলতা ও র্ধৈয ছিল রাহমাতুললিল আলামীনের! অঙ্গিকার ও চুক্তি ভঙ্গকারীর সাথেও চূড়ান্ত সদাচার ও দয়ার আচরণ করেছেন। যে পরিমাণ ঋণ তার পাওনা ছিল তার চেয়ে বেশী প্রদান করেছেন। এরপরও কি কেউ বলবে ইসলাম তলোয়ারের জোরে ছড়িয়েছে? ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম তলোয়ারে নয় উদারতায় প্রসার লাভ করেছে। আক্ষেপের কথা আজকের মুসলমান নর-নারীরা সেই মহান চরিত্র ভুলতে শুরু করেছে। যার কারণে তারা আজ প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত ও অপমানিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে  নবীজির চারিত্রিক সৌন্দর্য মজবুত করে আঁকড়ে ধরার তাওফীক দান করুন। আমীন।










  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

স্বামীর অবাধ্যতা ও ভয়ঙ্কর সাপ!

                                    بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 





হযরত মাওলানা মুফতী মাহমুদ হাসান গঙ্গোহী রহ. বলেন, প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে পাকিস্তানে এক মহিলার মৃত্যু হয়। জানাযার পর তার লাশ যখন কবরে রাখার জন্য খাটিয়া থেকে নীচে নামানো হয় তখন দেখা যায় কবরের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর সাপ! বিষাক্ত এই সাপ দেখে উপস্থিত লোকজন ভয় পেয়ে যায়। তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর ঐ মহিলার জন্য দ্বিতীয় আরেকটি কবর খুঁদা হয়। লাশ কবরে দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বিতীয় এই কবরটি খালিই ছিল। সাপ কিংবা অন্য কোনো প্রাণী সেখানে ছিল না। কিন্তু যখনই তারা লাশ কবরে রাখতে গেল তখনই দেখা গেল উহার মধ্যেও সেই সাপ যা প্রথম কবরে ছিল। 
এরপর তৃতীয় কবর খুঁদা হলো। তাতেও লাশ রাখার সময় প্রথম কবরের সেই সাপটি দৃশ্যমান হলো। অবস্থাদৃষ্টে সবাই বলাবলি করতে লাগল, এই লাশের জন্য যত কবরই খুঁদা হউক না কেন, সব কবরেই এই সাপ চলে আসবে। সুতরাং এই কবরেই লাশ দাফন করা হউক।
কবরে রাখার জন্য আবার যখন খাটিয়া থেকে লাশ নীচে নামিয়ে আনা হলো, তখন সাপটি কবরের এক পাশে গিয়ে লাশ রাখার জায়গা করে দিল। কিন্তু যখন লাশ রাখা হলো তখন সঙ্গে সঙ্গে সাপটি লাশের মুখ থেকে কাফন সরিয়ে তার জিহ্বা পেঁচিয়ে ধরল। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলেই আবারো পেরেশান হলো। আশ্চর্য হয়ে সবাই বলাবলি করতে লাগল, ঘটনা কি? কেন এমন হচ্ছে?
লাশ দাফন করতে আসা লোকদের মধ্যে মহিলার স্বামীও ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার স্ত্রীর উপর এই আযাব আসার কোনো কারণ কি আপনি বলতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, বলতে পারব। আমার স্ত্রী আমার সাথে অসদাচরণ করত। আমাকে নানারকম মন্দচারী করত। বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট দিত। কিন্তু আমি ধৈর্যধারণ করতাম। কখনও এর বদলা কিংবা প্রতিশোধ নিতাম না। তার কটুকথা ও দুঃখজনক আচরণের পরিবর্তে আমি তাকে কিছুই বলতাম না। 
স্বামীর কথা শুনে লোকজন বলতে লাগল, হ্যাঁ ভাই! আমরা বুঝতে পেরেছি, আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যেই আপনার স্ত্রীর এই দুরবস্থা। আপনি এখন দয়া করে তাকে মাফ করে দিন। তার জন্য মা প্রার্থনা করুন। নচেৎ তার রা নেই!
অতঃপর মহিলার স্বামী মহান আল্লাহর দরবারে হাত তুললেন। তার সাথে হাত তুলল উপস্থিত সবাই। স্বামী বললেন, হে আল্লাহ! আমি আমার স্ত্রীকে মাফ করে দিলাম। সুতরাং অনুগ্রহ করে আপনিও তাকে মাফ করে দিন। সেই সাথে কবরের যাবতীয় আযাব থেকে তাকে হেফাযত করুন। 
দোয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেখা গেল, ভয়ঙ্কর সাপটি মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল! ফলে সকলের পেরেশানী দূর হলো এবং তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। 
প্রিয় মা ও বোনেরা! আপনারা যারা স্বামীকে কষ্ট দেন, কটুবাক্য বর্ষণে জর্জরিত করেন, মুখে যা আসে তাই বলেন; স্বামীকে মানেন না, তার কথামত চলেন না, তার আনুগত্য করেন না, তাকে শ্রদ্ধা করেন না, সম্মান করেন না, আলোচ্য এই সত্য ঘটনাটি পাঠ করে এ ব্যাপারে একটু ভাববেন কি? নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে একটু চিন্তা করবেন কি? হ্যাঁ, যদি ভাবেন, যদি চিন্তা করেন, যদি স্বামীর সাথে সকল প্রকার অসদাচরণ পরিত্যাগ করতে পারেন, যদি অতীতের সকল ভুলের জন্য আজই স্বামীর পায়ে ধরে মা চেয়ে মা মঞ্জুর করাতে পারেন তাহলে আমি মনে করি, আপনি নিজের উপর বড় রহম করলেন, বড় এহসান করলেন এবং আমার বিশ্বাস, এই পথ ধরেই আপনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে পারবেন। কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, আল্লাহ পাক যেন আপনাকে সকল প্রকার অহমিকা পরিত্যাগ করে স্বামীর কাছে মা চেয়ে তাকে সন্তুষ্ট করার তাওফীক দান করেন। আমীন। আর হ্যাঁ, আরেকটি জরুরি কথা মনে রাখবেন, স্বামীর কাছে মা চাইলে স্ত্রীর সম্মান হ্রাস পায় না, বরং বাড়ে। আজ পর্যন্ত কোনো নারী একথা বলতে পারিনি যে, স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে তার সম্মান ও মর্যাদা কমেছে কিংবা সে ঠকেছে। তাই আবারও দোয়া করি, আল্লাহ পাক আপনাকে সঠিক বুঝ নসীব করুন। আমীন। [সূত্র : মালফুযাতে ফকীহুল উম্মত, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭০]





    যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !


মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ কামনা

                                    بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم




http://s.driver.tunerpage.com/wp-content/uploads/2012/03/175301.gif
প্রখ্যাত ইমাম ইউনুছ বিন ওবায়েদের নিকট বিভিন্ন মুল্যের কাপড় বিক্রীর জন্য রক্ষিত ছিল। এক রকমের কাপড়ের প্রতি জোড়ারদাম ছিল চারশো দিরহাম। অপর এক ধরনের কাপড়ের প্রতি জোড়ার দাম ছিল দু'শো দিরহাম।
তিনি নিজের ভ্রাতুষ্পুত্রকে দোকানে রেখে নামাজ পড়তে যান। এ সময় একজন লোক আসে এবং চারশো দিরহাম মুল্যের জোড়া চায়। ছেলেটি তাকে দু'শো দিরহাম মুল্যের জোড়া দেখায়। সেটা তার পছন্দ হয় এবং সন্তুষ্ট চিত্তে খরিদ করে নিয়ে যায়।
সে উক্ত কাপড় নিয়ে বাড়ী যাওয়ার সময় পথে ইমাম ইউনুছের সাথে সাক্ষাৎ হয়েযায়। ইউনুছ তার কাপড় চিনতে পেরে জিজ্ঞাসা করেনযে, সে ওটা কত দামে খরিদ করেছে? সে জবাব দেয় যে, চারশো দিরহাম।
তিনি বলেন্, এটা তো দু'শো দিরহাম মুল্যের কাপড়। যাওওটা ফেরত দিয়ে এসো। সে জবাব দিল, এ কাপড় আমাদের দেশে পাঁচশো দিরহাম মুল্যে পাওয়া যায়। তাই আমি ওটা সন্তুষ্ট চিত্তেইখরিদ করেছি। ইউনুছ বললেন,তোমাকে ফেরত নিতেই হবে। কারণ ইসলামের ব্যাপারে হীত কামনার চেয়ে উত্তম কাজ আর কিছু হতে পারে না। এই বলে তিনি তাকে দোকানে নিয়ে যান এবং দু'শো দিরহাম ফিরিয়ে দেন।
অতঃপর তিনি ভ্রাতুষ্পুত্রকে এই বলে তিরস্কার করেন্, "তোর লজ্জা করলো না? তোর মনে খোদার ভয়ের সৃষ্টি হলো না? শতকরা একশো ভাগ লাভ করিস। আর মুসলমানদের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখিস না?" ছেলেটি শপথ করে বললো যে, ক্রেতা খুব খুশী হয়েই কাপড় কিনেছিল। এতে তিনি বললেন, "তুই নিজের জন্য যা পছন্দ করিস- তা অপরের জন্যও পছন্দ করতে হয়, একথা ভুলে গেলি কেন?"










   যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

এক দুখিনী নারীর গল্প

                                     بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم




সত্তর দশকের শুরুলগ্নের কথা। তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়উজ্জীবিত দেশবাসী। দেশজুড়ে কেবল যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে গোপালগঞ্জ জেলার অদূরে অবস্থিত কাজুলিয়া গ্রামের এক দারিদ্রপীড়িত পরিবারেজন্ম নেয় পারভীন। জন্মের কিছুদিন পর বাবামারা যাওয়ায় লেখাপড়ায় তেমন হাতেখড়ি হয় নি তাঁর। অভাবী সংসারে কোনমতে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে সে। কিশোরীর দ্বারপ্রান্তে যখন, তখনচাচা ডা. আ. জলিল পাশের গাঁয়ের মান্নু মুন্সী’র সঙ্গে তাকে বিয়ে দেন।
বাল্য থেকে কৈশোরের এই গতিময়তায় কখনো সুখের দেখা মেলা ত দূরের কথা, যেন সে কল্পনাও করে নি।বিয়ের পর সে শ্বশুরালয়ে ছাড়ল সেই সুখের হাফটুকু । তাও আবার মাত্র ছ’বছরের জন্য। কারণ বিয়ের ছ’বছরের ইতিলগ্নেই দীর্ঘ দিন যাবত ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামী পৃথিবীতে তিনজন উত্তরসূরী রেখে মারা যান। স্বামীর ইন্তিকালের পর শ্বশুর-শাশুড়ীসহ তিন ছেলে নিয়ে বেশ কিছুদিন কাটেপারভীনের।
একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুতে শোকে শোকে একদিন শাশুড়ী সালেহা খাতুনও ইহমায়া ত্যাগ করেন। এদিকে ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে জীবনের বাকি সময়টুকু সুখে কাটাবার জন্যে উজির মুন্সী বাগেরহাটের তাসলিমা নামে এক অর্ধ বয়সী মহিলাকে বিয়ে করেন। তিন ছেলে, শ্বশুর ও সৎ শাশুড়ীকে নিয়ে এখন পারভীনের শুরু হল নতুন পথচলা।
খুলনা জুট মিলে সেকালেরম্যানেজার পদে ছিলেন তাঁর শ্বশুর। সময়ের গতিতে বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে একদিন তাঁর শ্বশুরের চাকুরীর মেয়াদও শেষ হয়ে এল। এখন তিনি রিটার্ডে। সংসার পরিচালনার জন্য উপার্জনকৃত কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে মুদি দোকান দিলেন তিনি। কিছুদিন পর রাতের আঁধারে গাঁয়ের চোর-বদমাইশ প্রকৃতির লোকেরা তাও লুট করে নিল। সারা জীবনের জমানোজায়গা-জমি ও সামান্য ভিটে বাড়ীই এখন তার জীবন পার করার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।
সৎ ছেলে বউয়ের জন্য সৎশাশুড়ী ঘরে আসা মানে তাঁর চির অশান্তির অনলেপড়া। দুখিনী পারভীনের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হল না। শত বিপদেও বিয়ের পর যেই শ্বশুর তাকে নিজ কন্যাতুল্য মনে করে অদ্যাবধি স্নেহকরে এসেছিলেন, তাঁর আবদার পূরণে ব্রতী ছিলেন; শুধু তাসলিমার কারণে সেই শ্বশুরই আজ তাকে অন্য চোখে দেখেন। তাইতো সংসারের যাবতীয় কাজ করাসহ নিত্যদিন শ্বশুর-শাশুড়ীর খেদমতে ব্যস্ত থাকার পরও তাদের রাগারাগি আর গালমন্দ শুনতে হয় তাকে।
উনিশ শ নিরানব্বই সনের কথা। বন্যা কবলিত সারা গোপালগঞ্জবাসী। বন্যারপানির প্রবল স্রোতের পাশাপাশি পারভীনের প্রতি পারিবারিক নির্যাতনও প্রকট আকার ধারণ করে। ঐ বন্যার একদিনের ঘটনা। শর্তা নিয়ে পারভীনের দশ বছর বয়সী বড় ছেলে রিপনের সঙ্গে সাত বছর বয়সী তাসলিমার কন্যা নূপুরের দুষ্টুমি হয় ।দুষ্টুমির এক পর্যায়ে দু’জনের মাঝে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতি দেখে প্রতিশোধের আগুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে তাসলিমা। তাই রিপনের হাতে শর্তা দিয়ে আঘাত করে এর প্রতিফলন ঘটায়।
এতটুকুতেই সে ক্ষ্যান্ত হয় নি। বরং এর কিছুদিন পর বিনা দোষে ছোট ছেলে শাওনকে কাটাযুক্ত খেজুর ডাল দ্বারা পিটিয়ে রক্তে রঞ্জিত করে। এমনিভাবে একইকালে মেঝ ছেলে শিপনের ওপরও শাশুড়ী তাসলিমা কর্তৃক চলে অতর্কিত হামলা। এহেন পরিস্থিতিতে পারভীনের কিছু করার ছিল না। সে শুধু মুখ বুজে সয়ে যায় এ ধরণের শত যন্ত্রনা। ঘর থেকে যেমনিভাবে নির্যাতন পোহাতে হয়, তেমনিভাবে বাইরের পাড়া-প্রতিবেশী কর্তৃকও তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয় অনাবরত।
দেড় বছর হল শ্বশুর মারা গিয়েছেন। নিস্তব্ধ শাশুড়ী। তাঁর থেকে এখন আর নির্যাতনের চিন্তাও করা যায় না। বাহ্যত এখন পারভীন অশান্তির কোপানলে না পড়লেও তাঁরওপর নির্যাতনের প্রক্রিয়াটা পাল্টেছে। ইদানীং গাঁয়ের কিছু উচ্ছৃঙ্খল-লম্পট কর্তকঅমানসিক নির্যাতন চলছে।

পারভীনের বয়স এখন ত্রিশোর্ধ। জীবন সায়াহ্নে দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে এই দুখিনীর আকুতি এই যে, ‘ছেলেবেলা হতে এ পর্যন্ত আমি বহু কষ্ট স্বীকার করেছি। আমায় আর কষ্ট দিও না। শরীরে আর যন্ত্রনা সয় না। তাই জীবনের এ অন্তিমকালে আমাকে ঐসব দুশ্চরিত্র-লম্পটদের হাত থেকে উদ্ধার করুন। আমি সম্মানের সঙ্গে শেষসময়টুকু পাড়ি দিতে চাই।


   যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !