Monday, 12 March 2012

একজন ফ্রিলাঞ্চারের গল্প

                     بِسْــــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ اارَّحِيم

এটা আমার প্রথম টিউন। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এইখানে আমি আমার নিজের জীবনের ফ্রীলাঞ্চার হওয়ার গল্প বলেছি সুমন নামের ছেলেটার মাধ্যমে।

ছেলেটির নাম সুমন। খুলনা ইউনিভার্সিটিতে পরে। বন্ধুদের হুজুকে পরে ইউনিপে নামক একটা MLM কোমপানির সাথে জড়িয়ে পরে। সে তার বাবাকে বুজিয়ে বড় অঙ্কের টাকা নেয়। এরপর ইউনিপের গল্পতো সবাই জানেন। ছেলেটি দিসেহারা হয়ে পরে। কি করবে কিছুই তার জানা নেই। তবে সুমনের একটা ভাল গুন আছে। সে তার বিপদের সময় তার কাছের কারো কাছে জিনিশটা শেয়ার করে। তো, সে তার কাছের এক সিনিয়র ভাই এর কাছে তার অবস্থার কথা খুলে বলল। ওই সময় ওই সিনিয়র ভাইটার ও খারাপ সময় যাচ্ছিল । সে ফ্রীলাঞ্চিং এ দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। সুমন কে দাদা বলল, তুমি ফ্রীলাঞ্চিং এর চেষ্টা করে দেখো। ছেলেটার এইদিকে বেশ আগ্রহ ছিল। শুরু করে দিল চেষ্টা। এর আগে সুমনের সপ্ন ছিল গ্রাফিচস এর উপর কাজ করবে । তার পকেট খালি। অনেক ধার দেনা। কি করবে সে। বাসা থেকে টাকা নেয়া বন্ধ। বন্ধুরা তাকে দেখলে ভয় পাই। টাকা ধার চাই কিনা। ছেলেটা অনেক চিন্তা করে বের করল তার ইংলিশে বেশ দক্ষতা আছে।

এটা কাজে লাগানোর পথ ও পেয়ে গেল। Article Writing টাকে বেছে নিল। প্রথমে অনেক ঘাটাঘাটি করে এবং ওই সিনিয়র দাদাটার সহায়তাই বিড করা শিখে গেল। বিড সে করতেই আছে কিন্তু কোন রেস্পন্সের দেখা নেই। পকেট এ টাকা নেই। ক্যান্টিনে বাকি। খাওয়ার টাকা নেই। চারিদিকে পাউনাদারের প্রেসার। দিশেহারা সুমন। তবে পাশে ছিল দাদা। ক্যামনে ক্যামনে জানি ৩০-৪০ টাকা যোগার হোতো আর দুই জনের একবেলা কেটে যেত।

হটাত সুমন একদিন দেখল freelancer.com এ তার একটা মেসেজ আসছে। সুমন তো খুশিতে আত্মহারা। মেসেজ এ একটা স্যাম্পলের জন্য বলছে। সুমন একটা স্যাম্পলে লিখে পাথিয়ে দিল। বয়ায়ার খুশি হয়ে কাজ টা তাকে দিল। সুমন খুশি হয়ে কাজ সুরু করে দিল। অনেক কষ্ট করে দুইরাত দুইদিন না ঘুমিয়ে কাজটা শেষ করে জমা দিল। এরপর বায়ার এর কোন রেস্পন্সের দেখা নেয়। দুই তিন দিন পর সুমন পেমেন্ট এর জন্য বলল। কোন রেস্পন্স নেয়। তার মানে তার এত কষ্ট সব বৃথা। ভাবছিল এই ৩০ ডলার পাইলে একটু তো শান্তি পেত। হল না।

আবার সে বিড করা সুরু করলো। বাকি, ধার বারতেই আছে। ১০-১৫ দিন পর সে আবার একটা প্রোজেক্ট জিতল। আবার হার ভাংগা পরিশ্রম । কাজ শেষ করলো, সাবমিট করল। বায়ার তো খুব খুশি। পেমেন্ট দিল এবং একটা খুব ভাল ফিডব্যাক দিল। এখন ডলার সে তুল্বে কিভাবে। তার তো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও নেই। অনলাইন এ ও  কোন অ্যাকাউন্ট নেই। খুজতে খুজতে আবার সেই দাদা। দাদার ফ্রীলাঞ্চের অ্যাকাউন্ট এ প্রোজেক্ট ছেরে টাকাটা পাঁঠিয়ে দিল। দাদার যে তখন খুব ভাল অবস্থা তা না। কোন রকম ধার দেনা করে মানিবুকারসে আর ব্যাংক এ একটা অ্যাকাউন্ট খুলছে। $৫০ এর কাজ করে সব কেটে কুটে $৩৭ মত তূলতে পারলাম। এরপর মনে হল আস্তে আস্তে হবে। এরপর?  ভাগ্য এত খারাপ যে পিসি টা গেল নষ্ট হয়ে। মাদারবোর্ড শেষ। কোনরকম ৩০০০ টাকা হলে পিসি টা চালু করা যাবে। কোন উপাই না দেখে বাসাতে মিথ্যা কথা বলে টাকাটা নিল সুমন। পিসি ঠিক করাল। আর ডলার থেকে যে টাকা পাইছিল ওইটা দুইদিনেই শেষ। ধার শোধ, একটু পেট ভরে খেতে গিয়ে টাকা শেষ। ধার তো ১০% এর মত ও শেষ হইনি। মডেম এ প্যাকেজ নেবে কিভাবে। আবার ধার। তো কাজ চলে আবার চলেনা করে ২ মাস শেষ। ক্যামনে যে গেল আল্লাই জানে। তো সব যোগার করে আবার বিড করা সুরু করলো সুমন। এইবার দেশি একটা বায়ার পেল। এই বায়ার টা সুমন কে নিয়মিত কাজ দিতে থাকল। খুব কম রেট, কিন্তু নিয়মিত কাজ দিত আর টাকা দিত। আস্তে আস্তে সুমন বুজতে শিখল। বিড করতে থাকল। মানিবুকারস অ্যাকাউন্ট খুলল। চলতে থাকল। বেশ কিছু ধার সে শোধ করে দিছে ।

এর পর হটাত সুমনের সব ডলার সহ মানিবুকারস অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে গেল। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। সুমনের পিসি আবার নষ্ট। মানিবুকারস সাসপেন্ডেড। আবার অনিশ্চিত সুমনের ফ্রীলাঞ্চিং ক্যারিয়ার। ওই সমই সুমনের ফ্রীলাঞ্চিং অ্যাকাউন্ট এ কিছু ডলার ছিল। ওইটা সিস্টেমে তুলে কোনোরকম পিসি ঠিক করলো। কিন্তু মডেম! না, সুমন বেশ কিছু ধার শোধ করে ফেলেছে। তাকে অনেকে এখন ধার দেই। তো মডেম হল। কাগজপত্র দিয়ে মানিবুকারস ঠিক হল। ফ্রীলাঞ্চিং চলতে থাকল। এরই মধ্যে ১০-১২ মাস শেষ হয়ে গাছে। কোনোরকম খেয়ে পরে বেচে ছিল সুমন।১ বছর ৪ মাস পর মানে ১৬ম মাসে সুমনের ইঙ্কাম ১২০০ ডলার এর উপরে। এখন সে প্রতি মাসে $১০০০ ইঙ্কাম করার লক্ষ্য নিয়ে মাস শুরু করে। সুমনের এখন অনেক বন্ধু। তাকে দেখলেই কাসে আসে। খোঁজ খবর নেয়।
এর মধ্যে সুমনের আরো কত যে ঝামেলা পোহাতে হইছে তার সব লিখতে গেলে লিখাটা আরো অনেক বড় হয়ে যেত। তাই সংক্ষেপে শেষ করলাম। এই খানে সুমন পেরেছে অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়েও  ফ্রীলাঞ্চিং এ নিজেকে তুলে নিয়ে আস্তে, তবে আপনি পারবেন না ক্যানো ?

0 comments

Post a Comment

Thanks for comment