Thursday, 12 April 2012

মনছুরা বিবি, সন্দেহ এবং যাকাত।

                          بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

১- মনছুরা বিবি
 
ইসলামকে আজকাল খুব সহজ কিছু মনে করা হয়। আমরা ইচ্ছামত যেভাবে খুশী সেভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করি। আমাদের ইসলামের অবস্থা মনছুরা বিবির ওযুরমত।
-মনছুরা বিবি যৌবনের শুরুতে একবার ওযু করার সুযোগ পেয়েছিলো।
এরপর সে উশৃঙ্খল হয়ে পরে।একদিন এক ওয়াজ মাহফিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে ওযু ভেঙ্গে যাওয়ার বিবরন শুনতে পেলো। এত সহজে ওযু ভেঙ্গে যায় তা সে জানতো না। তাই বক্তার ওয়াজ শুনেতার গায়ে জ্বালা ধরে গেলো।
সে তৎক্ষনাত মঞ্চে উঠে শ্রোতাদের লক্ষ্য করে বললো "ভাইসব, এই মওলানা যা বলছে সব মিথ্যা, এত সহজে ওযু ভঙ্গে না। তার প্রমান আমি। আমি গত ১০ বছর যাবত যিনা করছি কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার ওযু ভাঙ্গেনাই।"
-আমাদের ইসলামও মনছুরা বিবির ওযুর মত। যা ইচ্ছা তাই করি, আর দাবি করি আমরামুসলমান।
 
২- সন্দেহ
 
সন্দেহ একটি মারাত্মক রোগ। নামাজে দাড়ালে সন্দেহ হয়, ওযু আছে কি না, নামাজ ৩ রাকাত পরলাম না ৪ রাকাত। অনেকে সন্দেহ করি আমাদের ইসলাম ধর্ম ঠিক নাভুল? আজ যাকাত নিয়ে এক ব্লগারের এমন একটি লেখা পড়লাম। তাদের অবস্থা মাদ্রাসার সেই সন্দেহগ্রস্ত ছাত্রের মত।
এক ছাত্রের সন্দেহ হল তারমাথা নাই। ব্যপারটা ততকালিন বিশিষ্ট শিক্ষক মওলানা মুহাম্মদ ঈয়াকুব (রঃ ) এর কানে গেল। তিনি ছাত্রটিকে জিজ্ঞাস করলেন “ তোমার মাথা নাই?”
ছাত্রটি উত্তর দিলো “জী না”। এই শুনে মওলানা সাহেব জুতা খুলে ছাত্রটিরমাথায় মারতে লাগল।
ছাত্রটি চিতকার করতে লাগল, “মরে গেলাম, মরে গেলাম, খুব লাগছে”।
মওলানা সাহেব জিজ্ঞাস করলেন করলেন,"কোথায় লাগছে?”
ছাত্রটি উত্তর দিলো,"মাথায় লাগছে।“
মওলানা সাহেব বললেন,"মাথা তো নাই, ব্যথা লাগছে কেমনে?”
ছাত্রটি উত্তর দিলো,"মাথা আছে হুজুর, মাথা আছে।”
মওলানা সাহেব জিজ্ঞাস করলেন, "আর কোনদিন বলবা মাথা নাই?”
ছাত্রটি উত্তর দিলো, "না হজরত, না”।
তখন মওলানা সাহেব ছাত্রটিকে ছেরে দিলেন।
-তেমনি প্রমানিত হাদিস থেকে পাওয়া বিষয় নিয়ে সন্দেহ করা উচিত নয়। সেগুলোকে ঠিক মনে করে কাজকরতে হবে। বাকী আল্লাহ মাফ করনেওয়ালা।
 
৩- যাকাত
 
১- কেউ কেউ বলেছেন “কোথাও জাকাত অর্থে ‘সম্পদের ১/৪০ ভাগ দান করা’ এবং কোথাও জাকাত অর্থে ‘পবিত্রতা অর্জন’; একই শব্দের পরস্পর অসামঞ্জস্য/অসংগত অনুবাদউদ্দেশ্য প্রণোদিত”।
= আসলে দুই যাগাতেই জাকাতঅর্থ এক, ‘পবিত্রতা অর্জন’,প্রথমটিতে ১/৪০ ভাগ দান করা বলতে সম্পদ পবিত্র করার পদ্ধতি বলা হচ্ছে।প্রথম ক্ষেত্রে জাকাত অর্জনের পদ্ধতি লিখেছেন, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে জাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ লিখেছেন, তাই এই ভুল বোঝাবুঝি।
এই ‘পবিত্রতা অর্জন’ –কে ওযু করার সাথে তুলনা করা যায়।পরিষ্কার(পাক) শরিরে ওযু করলে পবিত্রতা অর্জিতহয়, অপরিষ্কার(নাপাক) শরিরে ওযু করলে পবিত্রতা অর্জিত হয়না বরং সারা শরির ধুতে হয়। সে রকম, আপনার হালাল সম্পদ থাককে তার ১/৪০ ভাগ দান করে(নবীজীর-শিক্ষা) তা পবিত্র করতে পারেন। আর আপনার সম্পদ হালাল না হয়েথাকলে পবত্রতা অর্জন করতেহলে সারা শরির ধোয়ার মত পুরোটাই ত্যাগ করতে হবে। দেহ পবিত্র না হলে যেমন প্রার্থনা কবুল হয় না তেমন সম্পদ পবিত্র না হলেও প্রার্থনা কবুল হয় না।
২- কেউ কেউ আরও লিখেছেন “আর তাই বলে মাত্র ২৩ বৎসরের মধ্যেই আরব বেদুঈনদের মধ্যে সম্পদের ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা স্তব্ধ হয়ে সমতা, ত্যাগ ও সেবার প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হয়;”।
=আপনাকে জানানো প্রয়োজন মনেকরছি যে নবীজীর অধিকাংশ বিশিষ্ট সাহাবি সুসভ্য আরব ছিলেন, খুব কম বিশিষ্ট সাহাবিই বেদুইন ছিলেন।
৩- কেউ কেউ আরও লিখেছেন তাদের ভেবে দেখা দরকার যে, ঐ ২.৫০% শতাংশ জাকাত দেয়ার পরে আমাদের মত পুনঃ ট্যাক্স দিত কিনা! যদি না দেয় তবে আমরা ক্রয় ট্যাক্স, বিক্রয় ট্যাক্স, সম্পত্তি ট্যাক্স, আয় ট্যাক্স, পথ ট্যাক্স, পানি-মাটি ট্যাক্স, নিকাহ ট্যাক্স ইত্যাদি নানা ধরণের (কথিত) জাকাত দিয়ে থাকি, যা একুনে ২.৫০% শতাংশের অনেক অনেক উর্ধে এবং যা বায়তুল মালেই জমা হয়।
=আপনাকে জানাতে চাই যে আপনি এই টেক্স মাগনা দেন না, এই টেক্সের বিনিময়ে আপনি রাষ্ট্রের কাছ থেকে সেবা পেয়ে থাকেন। এরকম টেক্স খলিফায়ে রাশেদিনের সময়ও চালু ছিলো। তারপরও সেইসময় জাকাত আদায়ের জন্যআলাদা ডিপার্টমান্ট ছিলো।
-আজকে আমরা কোরয়ান পড়ে বলছি কোথাও ১/৪০ ভাগ যাকাতের কথা বলা নাই।
আমরা কি যার কাছে কোরয়ান নাজিল হয়েছিলো, সেই নবী করীম(সাঃ ) –এর চেয়ে বড় হয়ে গেছি? নবী করীম(সাঃ ) সম্পদের যাকাত বলতে হালালসম্পদের ১/৪০ ভাগ দান করাকে বলেছেন। আর আমরা কোরয়ান পড়ে তাকে নিজের ইচ্চামত ব্যাক্ষ্যা করছি!!

0 comments

Post a Comment

Thanks for comment