Tuesday, 20 March 2012

কোরবানির ইতিহাস

http://www.bangladesh-pratidin.com/admin/news_images/203/image_203_37375.jpg
কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ। যারা আল্লাহপাকের একত্ববাদে বিশ্বাসী, যারা তাকে পালনকর্তা, লালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে অন্তরের অন্তঃস্থলে পরম যত্নের সঙ্গে স্থান দিয়েছেন, তারাই তার ইবাদতকে পরম সৌভাগ্যের বিষয় হিসেবে বরণ করে নিয়েছে। সেই আল্লাহর নামে নিজ অধিকারের কোনো বস্তুকে উৎসর্গ করা। মনে রাখতে হবে, এ উৎসর্গের মূল্যায়ন আর্থিকভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। হয় একমাত্র আল্লাহভীরুতার ওপর। কোরবানি একমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে। কোরবানি শব্দটি 'কুরব' থেকে এসেছে, যার অর্থ নৈকট্য, সানি্নধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। কোরবানির মাধ্যমে কোনো কিছু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া ।
মানব জাতির পিতা হজরত আদম (আঃ)-এর সময় থেকেই এই কোরবানি চালু হয়ে এসেছে। সে সময় কোরবানির অন্য নিয়ম প্রচলিত ছিল। কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট বস্তু বা জন্তুকে কোনো একটি উঁচু স্থান বা পাহাড়ে রেখে আসা হতো। যার কোরবানি আল্লাহপাক কবুল করতেন, সেই বস্তু বা জন্তুটিকে আকাশ থেকে একটি আগুনের ফুলকি এসে জ্বালিয়ে দিত। আর যে কোরবানিটি আল্লাহপাক কবুল করতেন না, সেটি সেভাবেই পড়ে থাকত। তখন কোরবানির মাংস খাওয়া যেত না, সম্পূর্ণটাই উৎসর্গ, সুতরাং পুড়ে যেত। পরে আল্লাহপাক এই নিয়ম বাতিল করেন এবং কোরবানির পশুর মাংস খাওয়া জায়েজ করেন।
হজরত আদম (আঃ)-এর সন্তান জন্ম নিত জোড়ায় জোড়ায়। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে। তাদের মধ্যে বিয়ে হতো এক জোড়ার মেয়ের সঙ্গে অন্য জোড়ার ছেলের। কিন্তু কাবিলের সঙ্গে যে মেয়ে ছিল সে সুন্দরী না হওয়ায় আর তার সঙ্গের মেয়েটি সুন্দরী হওয়ায় সে জিদ ধরল সে তার জোড়ার মেয়েকেই বিয়ে করবে। এই নিয়ে হাবিল আর কাবিলের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। এই বিবাদ মীমাংসার জন্য পিতা হজরত আদম (আঃ) বললেন, তোমরা আল্লাহপাকের দরবারে কোরবানি পেশ কর। আল্লাহপাক যার কোরবানি কবুল করবেন, তার সঙ্গেই আকলিমার বিয়ে হবে। পিতার সিদ্ধান্তে একমত হয়ে হাবিল একটি দুম্বা আর কাবিল কিছু ফল-ফসল একটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে এলো। তখন আসমান থেকে একটি আগুনের ফুলকি এসে হাবিলের কোরবানিটি ছাই করে দিল। আর কাবিলের কোরবানি অবিকল পড়ে রইল। এতেই প্রমাণিত হলো যে, কাবিলের সঙ্গে আকলিমার বিয়ে হতে পারে না। কোরআনে কারীমে কউমে আদ এবং অন্যান্য কউমের কোরবানির কথাও বলা আছে।
তবে আমরা মুসলমানরা মূলত মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর সুন্নত অনুসরণ করি। আল্লাহপাক তাকে অনেকভাবে পরীক্ষা করেছেন। আল্লাহ তাকে ৯০ বছর পর্যন্ত কোনো সন্তানাদি দেননি । তারপর তাকে আল্লাহ একটি সুসন্তানের সুসংবাদ দান করেন। হজরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তার স্ত্রী সম্পূর্ণ অবাক হয়ে যান। ফেরেশতাদের দ্বারা এই সংবাদ পেয়ে তারা প্রশ্ন করেন, তা কি করে সম্ভব? তখন ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দেন, আপনার পালনকর্তার কাছে এটা অসম্ভব কিছু নয়। তারপর সন্তান হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই হজরত ইব্রাহীম (আঃ) অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হন এবং সন্তানকে খুব ভালোবাসতেন। আল্লাহ তখন পরীক্ষা করতে চাইলেন, ইব্রাহীম আমাকে বেশি ভালোবাসে না তার সন্তানকে। তাই তিনি তাকে স্বপ্ন দেখান তার প্রিয় জিনিস কোরবানি দিতে। ইব্রাহীম (আঃ) অনেক পশু কোরবানি দেওয়ার পরও একই স্বপ্ন বারবার দেখার পর বুঝলেন আল্লাহপাক তার ছেলেকে কোরবানি দিতে বলছেন। তিনি ইসমাঈল (আঃ) কে নিয়ে রওনা হলেন, তখন পথে শয়তান ইসমাঈল (আঃ)কে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি পাথর ছুঁড়ে মারেন। ইব্রাহীম (আঃ) যখন তার ছেলেকে তার অভিপ্রায়ের কথা জানালেন, তিনি উত্তর দেন পিতা আপনাকে আল্লাহ যা আদিষ্ট করেছেন আপনি তা পালন করেন, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্গত হিসেবে পাবেন। হজরত ইব্রাহীম (আঃ) শক্ত করে রশি দিয়ে বেঁধে নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বন্ধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে ছেলেকে কোরবানি করার চেষ্টা করেন। ওদিকে আল্লাহপাক ছুরিকে নিষেধ করে দেন ইসমাঈল (আঃ)কে কাটতে। ফলে এত ধারালো ছুরি দিয়ে তিনি বারবার চেষ্টা করেও কাটতে পারেননি। তখন মনের দুঃখে ছুরি ছঁড়ে মারেন। ছুরি পাথরের উপর পড়ে পাথর খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ)-এর ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং বেহেশত থেকে ফেরেশতা দ্বারা দুম্বা পাঠিয়ে দেন কোরবানি করার জন্য; আর বলেন, ইব্রাহীম তুমি তোমার দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ আর আমি তোমার কোরবানি কবুল করেছি। তুমি ইসমাঈলের বদলে দুম্বা কোরবানি কর। ইব্রাহীম (আঃ)-এর অপূর্ব আত্মত্যাগের কারণে আল্লাহপাক তাকে জাতিসমূহের নেতা করেছেন এবং আমরা প্রতি নামাজে দরুদের মাধ্যমে তার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করি।
সুতরাং আমাদেরকেও আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে হবে। কোরবানি করার জন্য নির্দেশ রয়েছে সূরা কাউসারে। আল্লাহপাক বলেছেন, আপনি রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। কোরবানি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'কোরবানি দিনের পছন্দনীয় আল্লাহপাকের নিকট অন্য কোনো দিন নয়। উক্ত দিনে কোরবানি করা সমস্ত নেক কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই তা আল্লাহপাকের নিকট কবুল হয়ে যায়'। তিনি আরও বলেন, 'কোরবানির জন্তুর শরীরে যত লোম আছে প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি তার আমলনামায় লিখে দেওয়া হয়'। রাসূলে পাক (সাঃ) আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি সামর্থথাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমার মুছল্লায় (ঈদের জামাত) না আসে'। প্রতিটি সামর্থ্যবান লোকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যাকাত পরিমাণ মাল থাকলে কোরবানি দিতে হবে। মুসাফিরের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় না।

কোরবানী ঈদ বা ঈদুল আযহার কতিপয় সুন্নত ।

                  بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم     



 আসুন সবাই জেনে নেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েকটি সুন্নত আর সেগুলো পালন করে হাসিল করি অশেষ নেকি ।
১|ঈদুল আযহার দিন খুব ভোরে জাগ্রত হওয়া ।ফজরের পর থেকে গোসলের প্রষ্তুতি নেওয়া ।গোসল শেষে যার যার সাধ্য অনুযায়ী নতুন কাপর /অপেক্ষাকৃত নতুন কাপড় কিংবা পাকসাফ কাপড় পরিধান করা ।
২|গায়ে আতর জাতীয় খুশবু মাখা ।
৩|ঈদুল ফিতরে সাধারনত আমরা ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে নেই (সুন্নত) ।কিন্তু ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাজে যাওয়া এবং কোরবানী সম্পন্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা ।
৪|যে পথে ঈদগাহে যাবেন সে পথ বাদে অন্যপথে বাড়ি ফেরা ।

কোরবানির ফজিলত

                 بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم


(ক) কুরবানীর পশুর শরীরে যত পশম থাকে, প্রত্যেকটা পশমের পরিবর্তে এক একটি নেকী পাওয়া যায়।
(খ) কুরবানীর দিনে কুরবানীই হলো সবচেয়ে বড় এবাদাত।
(গ)আয়শা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নাই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর,পশম সমূহ ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পুর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়। অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদেরনফস কে পবিত্র কর।
مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلًا أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلَافِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا
ইবনে মাজাহ ২/১০৪৫, হাদিস৩১২৬।
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফজিলত
জিলহজ্জ মাসের দশম তারিখে ঈদুল আদ্বহা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে বিত্তবানেরা দরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়ায়, অসহায় দুস্থ লোকেরা এই দিনে বিত্তবানদের থেকে পায় বিশেষ সহনুভবতা, সব মিলে একে অপরের সুখ-দুখ, আনন্দ-ব্যদনা বুঝতে সক্ষম হয়, যার ফলে আল্লাহর কাছে এই মাসের ফজিলত অনেক বেশি। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন,
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلَ مِنْهَا فِي هَذِهِ قَالُوا وَلَا الْجِهَادُ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُبِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ
জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল অন্য যে কোন দিনের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ প্রশ্নকরলেন, জিহাদ ও নয় কি ? রাসুলুল্লাহ  বললেন জিহাদ ও নয়, তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়েছে আর ফিরে আসে নি। অর্থাৎ শহিদহয়ে গেছে।
বোখারী, ১/৩২৯, হাদিস ৯২৬। ফতহুলবারী লিইবনে হাজার, ৩/৩৯০, হাদিস ৯১৬।
কাদের উপর কুরবানী দেয়া ওয়াজিব
১। ১০ই যিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থ্যাৎ কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা
ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী কতরা ওয়াজিব।
২। মুসাফিরের উপর (সফর রতঅবস্থায় থাকলে) কুরবানীকরা ওয়াজিব হয় না।
৩। কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানীর চওয়াব পাওয়া যাবে।
৪। কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়-সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ
থেকে করলে তা নফল কুরবানীহবে।
৫। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু করুবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
৬। কোন মকসুদের (উদ্দেশ্য) জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মকসুদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব বা ধনী) কুরবানী করা
ওয়াজিব হয়ে যায়।
৭। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী না করলে কুরবানী দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর
(ছাগল) মুল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কোন কোন পশু দ্বার কুরবানী করা জায়েজ
বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাড়, বলদ, মহিষ, উট, এই কয় প্রকার গৃহপালিত পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ।
কুরবানীর পশুর বয়স প্রসঙ্গ
(ক) বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কম পক্ষে পূর্ণ এক বৎসর বয়সের হতে হবে। বয়স যদিকিছু কমও হয় কিন্ত এরুপ মোটা তাজা যে, এক বৎসর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে। তবে বকরী কোন অবস্থা এক বৎসরের কম হলে চলবে না।
(খ) গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে।
(গ) উট এর বয়স কম পক্ষে পাঁচ বৎসর হতে হবে।
কুরবানীর পশুর স্বাস্থ্যগত প্রসঙ্গ
(ক) কুরবানীর পশু ভাল এবংহৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম।
(খ) যে প্রাণী লেংড়া অর্থ্যাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে-এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না এরুপ পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত হবে না।
(গ) যে পশুর একটিও দাঁত নেই তার দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(ঘ) যে পশুর কান জন্ম হতে নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়, তবে কান ছোট হলে অসুবিধা আছে।
(ঙ) যে পশুর শিং মুল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। তবে শিং উঠেইনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরপু পশু দ্বারা কুরবানী জায়েজ আছে।
(চ) যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ নেই।
(ছ) যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(জ) অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়।
(ঝ) ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কুরবানী দুরস্ত হয় না-এরপু হলে সেটিই কুরবানী দেয়া দুরস্ত হবে।
(ঞ) গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরুপ পশু কুরবানী দেয়া মাকরুহ।
(ট) বন্ধ্যা পশু কুরবানী করা জায়েজ আছে।
শরীকের মাসায়েল
০১। বকরী, পাঠা, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বায় এক জনের বেশী শরীক হয়ে কুরবানী করা যায় না। এগুলো একটা একজনের নামেই কুরবানী হতে হবে।
০২। একটা গরু, মহিষ, উটে সর্ব্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে, তবে সাতজনই হতেহবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই, সেক্ষেত্রে সাত/ছয়/পাঁচজন কুরবানী দিতে পারে। তবে কারো অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হলে তা হবে না।
০৩। মৃত্যের নামেও কুরবানী হতে পারে।
০৪। রাসুলে কারীম (সাঃ), তাঁর বিবিগণ ও বুযুর্গদের নামেও কুরবানী হতে পারে।

উইন্ডোজ ৮ এর কোন কোন এডিশন সামনে আসতেছে!!!

আজ আপনাদেরকে একটি নতুন সংবাদ দিতে যাচ্ছি। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে খুবই ভাল আছেন। ভাল থাকুন ও ভাল রাখুন আপনার পাশের মানুষটিকে।
কয়েকদিন আগে রিলিহ হলো মাইক্রোসফট কর্পোরেশানের মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের নতুন ভার্সন মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ কনজুমার প্রিভিউ ভার্সন ( বেটা ভার্সন)। অনেকেই এই নতুন অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে মোটামুটি ভাবে জানেন। এই অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে আমার লেখা কয়েকটি টিউটোরিয়াল আছে টিউনারপেজে। আপনারা সার্চ অপশানে সার্চ দিলেই পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে কিভাবে উইন্ডোজ ইন্সটল করবেন, পেনড্রাইভ থেকে কীভাবে ইন্সটল করবেন, আনইন্সটল করা, ডুয়েল বুটে উইন্ডোজ ৭ ও ৮ চালানো, ভার্চূয়াল ইন্সটলসহ আরও কয়েকটি।
এই নতুন অপারেটিং সিস্টেম বাজারে রিলিজ দেয়ার আগে মাইক্রোসফট প্রথমেই একটি ডেভেলপার প্রিভিউ ভার্সন বাজারে দেয়। যাতে এর ভিতরে থাকা সমস্যাগুলো ধরা যায়। তারপর সমস্যাগুলো ঠিক করে এর নতুন একটি বেটা ভার্সন “মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৮ কনজুমার প্রিভিউ ভার্সন” রিলিজ করে মাইক্রোসফট। এটি তো হল মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টম উইন্ডোজ ৮ এর বেটা ভার্সন। এটা মূলতঃ উইন্ডোজ ৮ এর একটা প্রিভিউ ভার্সন। উইন্ডোজ ৮ এর মূল ভার্সন এখনও বাজারে রিলিজ করা হয় নি মাইক্রোসফট থেকে।
মাইক্রোসফট এখন তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮ এর মূল ভার্সন রিলিজ করার জন্য কাজ করছে। তারা এজন্য অন্যন্যা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের মতো উইন্ডোজ ৮ এরও কয়েকটি ভার্সন রিলিজ করবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর। তবে শুনা যাচ্ছে এই বছরের শেষের দিকে আপনারা উইন্ডোজ ৮ এর ফুল ভার্সন হাতে পাবেন।
মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ৮ এ যেসব ভার্সনগুলো সামনে রিলিজ করবে, তার তালিকা তারা প্রকাশ করেছে তাদের বর্তমান বেটা ভার্সন Windows 8 Consumer Preview version এ। আপনি এটা দেখতে পাবেন Windows Registry Editor এ। এজন্য প্রথমে Windows Registry Editor এ। এজন্য প্রথমে Windows Registry Editor এ প্রবেশ করুন।
—-> প্রথমে Window Key + R চাপুন।
—-> এবার লিখুন regedit ও এন্টার চাপুন।
—-> তাহলেই Windows Registry Editor চালু হবে।
—-> এবার এখানে যান HKEY_LOCAL_MACHINE\Software\Microsoft\Windows\CurrentVersion\Component Based Servicing\PackageIndex\Product
—-> তাহলে নিচের মতো আসবে।

নতুন যে ভার্সনগুলো আসতেছে

  • Microsoft Windows Enterprise Edition
  • Microsoft Windows Enterprise Eval Edition
  • Microsoft Windows Home Basic Edition
  • Microsoft Windows Home Premium Edition
  • Microsoft Windows Prerelease ARM Edition
  • Microsoft Windows Prerelease Edition
  • Microsoft Windows Professional Plus Edition
  • Microsoft Windows Starter Edition
  • Microsoft Windows Ultimate Edition
আশা করি প্রত্যেকটি ভার্সনটি চমৎকার ও সুন্দর হবে।

Monday, 19 March 2012

দুরূদ শরীফ এর ফজিলত

                      
                  بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم



১। মৃত্যুর সময় দীদারে মুস্তফা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم
বুজর্গরা বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাত) এই দুরূদ শরীফটি নিয়মিতভাবে কমপক্ষে একবার পড়বে, মৃত্যুর সময় সে সারকারে মদীনা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم এর যিয়ারত লাভ করবে এবং কবরের মধ্যে প্রবেশের সময় সে এটাও দেখবে যে, সারকারে মদীনা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم তাকে উনার রহমতপূর্ণ হাতে রাখছেন।
(আফজালুস সালাত আলা সায়্যিদিস সা্-দাত, পৃঃ-১৫১ হতে সংক্ষেপিত)
اَللَّهُـمَّ صَلِّ وَسَلَّمْ وَبَارِكْ اَلىَ سَيِّدِناَ مُحَمَّدِ النَّبِىِّ الْاُمِّىِّ الْحَبِيْبِ الْاعاَلِى الْقِدْرِ الْعَظِيْمِ الْجَاهِ وَ عَلَى اَلِهِ وَصَحْبِهِ وِ سَلِّمْ
 
২। সমস্ত গুনাহ মাফ
হযরতে সায়্যিদুনা আনাস رَضِىَ اللهُ تَعاَلَى عَنْهُ  থেকে বর্ণিত আছে যে, তাজদারে মদীনা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم বলেছেন, “যে ব্যাক্তি এই দুরূদে পাকটি পড়বে, সে যদি দাঁড়ানো থাকে তাহলে বসার পূর্বে, আর যদি বসা থাকে তবে দাঁড়ানোর পূর্বেই তাঁর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
(আফজালুস সালাত আলা সায়্যিদিস সা্-দাত, পৃঃ-৬৫ হতে সংক্ষেপিত)
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِناَوَمُهَمَّدٍوَّعَلَى اَلِهِوَسَلِّمْ
 
৩। রহমতের সত্তরটি দরজা
যে ব্যাক্তি এই দুরূদে পাকটি পড়বে তাঁর জন্য রহমতের ৭০টি দরজা খুলে দেওয়া হয়।
(আল ক্বাওলুল বদী, পৃঃ- ২৭৭)
صَلَّى اللهُ اَلىَ مُهَمَّدٍ
 
৪। একহাজার দিনের নেকী
হযরতে সায়্যিদুনা আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعاَلَى عَنْهُ  হতে বর্ণিত আছে যে, সারকারে মদীনা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم বলেছেন, এই দুরূদে পাক পাঠকারীর জন্য ৭০ জন ফিরিস্তা এক হাজার দিন পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকেন। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খন্ড-১০ম, পৃঃ-২৫৪, হাদীস নং-১৭৩০৫)
جَزَى اللهُ عَناَّمُحَمَّدًاماَهُوَاهْلُهُ
 
৫। ছয় লক্ষ দুরূদ শরীফের সাওয়াব
হযরতে আহমদ সা-বী عَلَيْهِ رَحْمَةُاللهِ الْهَدِى  কিছু বুজর্গদের কাছ থেকে উদ্ধৃত করেন, এই দুরূদ শরীফটি একবার পড়ার দ্বারা ছয়লক্ষ দুরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব অর্জন হয়।
(আফজালুস সালাত আলা সায়্যিদিস সা-দাত, পৃঃ-১৪৯)
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِناَ وَمُهَمَّدٍعَدَ دَ ماَفىْ علْمِاللهِ صَلَاتً دَآأِمَةً بِدَوَامِ مُلْكِاللهِ
 
৬। মুস্তফা صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم এর নৈকট্য
একদিন এক ব্যাক্তি আসলেন, তখন হুজুরে আনওয়ার صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم তাকে নিজের এবং ছিদ্দিকে আকবর رَضِىَ اللهُ تَعاَلَى عَنْهُ এর মাঝখানে বসালেন। এতে সাহাবায়ে عَلَيِهِمُ الرِّضْ ونهُ কিরাম গণ খুবই আশ্চার্যান্বিত হলেন যে, ইনি কোন্ সম্মানিত ব্যক্তি! যখন ঐ ব্যাক্তিটি চলে গেলেন তখন সারকার صلًى اللهُ تعاَلَى عَليْهِ واَلِهِ وسلًم     বললেন, সে যখন আমার উপর দুরূদে পাক পড়ে তখন এটাই পড়ে। (আল ক্বাওলুল বদী, পৃঃ-১২৫)
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُهَمَّدٍ كَمَاتُحِبُّ وَتَرْضَى لَهُ

জুম’আর আদব

                  بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم



১। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদেরজন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)।
পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)

কয়েকটি হাদিস

                   بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم
 
আনাস ইবনে মালিক [রাযি] থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ"আদম সন্তানের বয়স বাড়ে কিন্তু তাতে দু'টো বিষয় জওয়ান হয়, জীবনের প্রত্যাশা এবং সম্পদের মোহ।" {সুনানে তিরমিযী-২৩৪২}
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ একদা জিজ্ঞেস করলেন-“তোমরা কি জান, প্রকৃত নিঃস্ব কে?” সাহাবারা উত্তরে বললেন-“আমাদের মাঝে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কোন টাকা-পয়সাবা সহায় সম্পত্তি নাই”। নবী কারীম সাঃ বললেন-“প্রকৃত নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিননামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি নিয়ে হাজির হবে। সাথে এটাও নিয়ে আসবে যে, কাউকে গালি দিয়েছে। কাউকেমিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। কারো মাল খেয়ে ফেলেছে। কাউকে হত্যা করেছে। কাউকেপ্রহার করেছে। তারপর তার পূণ্যগুলির কিছু একজনকে আর কিছু অন্যজনকে দেয়া হবে। যদি হকদারদের দাবী শেষ হওয়ার আগেই তার পূণ্যশেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপ তাকে সোপর্দ করা হবে।অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল মু’জামুল আওসাত, হাদিস নং-২৭৭৮,
সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২৪১৮, ,
সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৭৪৪,
মুসনাদুস সাহাবা ফিল কুতুবিত তিসআ, হাদিস নং-৬২০
আবু আইয়ুব [রাযি] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেনঃ চারটি বিষয় হল রাসূলগণের সুন্নাতঃ
~ লজ্জা
~~ আতর ব্যবহার
~~~ মিসওয়াক এবং
~~~~ বিবাহ। {তিরমিযী-১০৮০}
এই বিষয়ে আমিরুল মুমিনীন হযরত উসমান [রাযি], ছাওবান [রাযি], উম্মুল মুমিমীন আয়িশা [রাযি], আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাযি], আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রাযি], জাবির [রাযি], ও আককাফ [রাযি] থেকেও হাদিস বর্ণিত আছে।
ওমর ইবনে খাত্তাব [রাযি] থেকে বর্ণিত, নবী করীম [সা] বলেনঃ তোমাদের সবচেয়ে ভাল শাসক এবং সবচেয়ে মন্দ শাসক সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করব কি?
সবচেয়ে ভাল শাসক হলেন তারা, যাদের তোমরা ভালবাসএবং যারা তোমাদেরকেও ভালবাসে, যাদের জন্য তোমরা দোয়া কর এবং যারা তোমাদের জন্য দোয়া করে।
আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক হল তারা, যাদের তোমরা ঘৃণা কর এবং যারা তোমাদেরঘৃণা করে, যাদের তোমরা লানত কর এবং যারা তোমাদেরলানত করে। { তিরমিযী শরীফ -২২৬৭}