Thursday, 12 April 2012

সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ

                بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ
ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। নামাজ বা সালাত অন্যতম ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই পবিত্র কোরআনুল করীমে ৮২ জায়গায় নামাজ কায়েম করার প্রতি সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ইসলামে নামাজের গুরুত্ব-তাত্পর্য যেমন অপরিসীম-তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত ইহ-পরকালের মুক্তিলাভের প্রধান অবলম্বন হিসাবে নামাজের বৈশিষ্ট্য অতীব তাত্পর্যপূর্ণ। যে ব্যক্তি নামাজেয় আনুষঙ্গিক শর্তাবলী যথারীতি পালন করে নামাজ আদায় করবেন আল্লাহ পাক স্বীয় আশ্রয় ওনিরাপত্তায় রাখার নিশ্চয়তা প্রদান করবেন। আমাদের মহানবী হজরত রাসূলে মকবুল (সা: বলেছেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ স্বচ্ছ নহর সমতুল্য অর্থাৎ দৈনিক পাঁচবার ঐ স্বচ্ছ পানিতে গোসল করলে যেমন শরীরের ময়লা, ধূলোবালি দূর হয়ে যায়, তেমনি পাঁচ ওয়াক্তেরনামাজ সমুদয় গুনাহ রশি মাফ করে দেন। রাসূলে পাক (সা: আরো বলেছেন, নামাজ ধর্মের ভিত্তি। যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করেছে সে ধর্মকে বিনাশ করেছে।
একবার কিছুসংখ্যক লোক হজরত নবী পাককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূল্লাহ (সা: সর্বোত্তম কাজ কোন্টি? উত্তরে আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন-ঠিক সময় সালাত অর্থাৎ নামাজ আদায় করা। তিনি আরো বলেছেন, নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি। তিনি অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাকুলের উপর তাওহীদের পরে নামাজ অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোন জিনিস ফরজ করেন নাই। হুজুরে পাক (সা: আরো বলেছেন, রোজ কেয়ামতে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। যে ব্যক্তি ছহি-শুদ্ধভাবে পবিত্রতার সাথে নামাজ আদায় করবে। তার পাওনা যথাযথভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পূর্ণ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তিনামাজকে অপূর্ণভাবে আদায়করবে তার নামাজকে অন্যান্য আমলসহ নামাজীর মুখমন্ডলে ছুঁড়ে দেয়া হবে। হজরত রাসূলে মকবুল (সা: অন্যত্র বলেছেন, যে ব্যক্তি যথারীতি নামাজ আদায় করে রুকুসেজদা পুরোপুরি সমাধা এবংঅন্তরে নম্রতা, বিনয়, ভক্তি ও মহব্বত কে স্থান দেয়, তাঁর নামাজ নূরানী হয়ে আরশ পর্যন্ত আরোহণ করে। সেখান থেকে সর্বদর্শী আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করতে থাকে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি অতীব সতর্কতার সাথে নামাজ আদায় করে না- তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে। নামাজের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মহানরাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন: “ওয়াইন্নাহা লাকিবিরাতুন ইল্লাআলাল্ খাশেয়ীনা-আল্লাজিনা ইয়াজুন্নুনা আন্নাহুম মুলাক্কু রাব্বিহীম ওয়া আন্নাহুম ইলাইহে রাজিউন, অর্থাৎ: নামাজ কঠিন কাজ তবে ঐ সকল লোকের প্রতিময়,যারা ভয়-ভীতির সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং মনে করে যে, তারা আখেরাতে আল্লাহ সর্বশক্তিমানের সম্মুখে উপস্থিত হবে এবং প্রত্যাবর্তন করবে। পবিত্র কোরআন পাকে আরো বলা হয়েছে:” ফাওয়াইলুল্লিল মুছাল্লীনাল্লাযীনাহুম আন ছালাতিহিম সাহুনাল্লামীনাহুম ইউরাউন। অর্থাৎ:- সেই সকলনামাজীদের জন্য সর্বনাশ, যারা নিজ নিজ নামাজ সম্পর্কে উদাসীন এবং যারা কেবল মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক আরো বলেছেন: যারা নামাজ বরবাদ করেছে এবং নফসের দিকে অনুসরণ করেছে- তারা শীঘ্রই ধ্বংসের সম্মুখীনহবে।
একথা অনস্বীকার্য সালাত বা নামাজ আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত,বরকত-নেয়ামত এবং নাজাত লাভের নির্দেশিকা, সর্বোচ্চ যে বিষয়টি তা হলো-পরম করুণাময় আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগারের দরবারে কায়মনে আত্মসমার্পণ করার জন্যে নামাজ সর্বোত্তম মাধ্যম।পবিত্র এই শ্রেষ্ঠতম ইবাদত সম্পর্কে হজরত রাসূলে পাক (সা: বলেছেন, আস্সালাতু মে’রাজুল ম’মিনান, অর্থাৎ: নামাজ মু’মিনের জন্য মে’রাজ শুধু গুনাহ পাপ পংকিলতা মুক্তিই নয়-পার্থিব জীবনে যে কোন কঠিন সমস্যায় পড়লে নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করলে উদ্ধার পাওয়া যায় এবং যে কোন আপদ-বালা, মুসিবত থেকে নাজাত লাভের “সালাতুল হাজত নামাজ পড়ারও বিধান রয়েছে।আখেরাতে নাজাত পাবার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে নামাজ। এই পবিত্র নামাজের মাধ্যমেই আমরা এক কাতারে শামিল হয়ে শ্রেণী বৈষম্য ভুলে যাই এবং দ্বীন-ধর্ম হুকুম-আহ্কাম পালনে শরীক হই। নামাজের মাধ্যমেই আত্মাপরিশোধিত হয়।
স্মরণ রাখা আবশ্যক দুনইয়া-আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহে, আল্লাহর নৈকট্য লাভে অত্যন্ত খুশু-খুজু অর্থাৎঃ অতীব বিনম্র চিত্তে সমার্পিত হৃদয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে নিজকে হাওয়ালা সম্পূর্ণ করে সত্যিকার আল্লাহর খাস বান্দা হিসাবে আমাদেরকে নামাজেরমাধ্যমে নিজদের বিলিয়ে দেই এবং মহান পাক পরওয়ার দেগার জীবনের শেষ মুহর্ত পর্যন্ত সহীহ্ শুদ্ধভাবেনামাজ আদায় করার তৌফিক দেন।


 

যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

নামাজের দৈহিক উপকারিতা

                 بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

ইসলাম ধর্মে যে পাঁচটি কাজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে নামাজ অন্যতম। এটা এমন একটি ইবাদত যা মানুষকে মহান আল্লাহপাকের কাছাকাছিই করে না, শারীরিক কল্যাণও সাধিত হয়। আমাদের প্রিয় নবী সাঃ বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো কারো বাড়ির পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত স্রোতধারার মতো। কোনো ব্যক্তি তাতে পাঁচবার গোসল করলে যেমন গায়ে ময়লা থাকতে পারে না, তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও মানুষকে পবিত্র করে দেয়।’ আর আল্লাহপাক পবিত্র কালামে পাকে ৮২ বার নামাজ কায়েমের কথা বলেছেন। নামাজের ফলে শুধু সওয়াব অর্জনই হয় না দৈহিকভাবেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। নামাজ উত্তম ব্যায়াম। অলসতা ও বিষণ্নতার যুগে নামাজই একমাত্র ব্যায়াম যা দ্বারা ইহকালীন বেশিরভাগ ব্যথার উপশম হয়। সঠিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, গর্দান, সিনা ও ফুসফুস সতেজ থাকে। এর ফলে হায়াত বৃদ্ধি পায়।
পবিত্র ধর্ম ইসলাম কতটা বৈজ্ঞানিকভাবে সমৃদ্ধ তা বোঝা যায় নামাজের সময়সূচি দ্বারা। মানুষ সারারাত শুয়ে ঘুমায়, ফলে বিভিন্ন অঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই রাখা হয়েছে তাহাজুদ্দের ও ফজরের নামাজ। অতঃপর কিছুক্ষণ বিরতি নাস্তার জন্য। পরে এশরাক্‌ ও চাশ্‌তের নামাজ। কাজে কর্মে মানুষকে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে লম্বা বিরতির পরে জোহরের নামাজ রাখা হয়েছে। রাতে এশার নামাজটা বিতর ও হাল্‌কি নফলসহ দীর্ঘ করা হয়েছে। কারণ অনেকেই হজমের সুবিধার জন্য এশার নামাজের আগেই পানাহার সেরে ফেলেন। কাজেই আল্লাহ কত সুপরিকল্পিতভাবে নামাজের সময় বেঁধে দিয়েছেন ভাবতে অবাক লাগে।
পবিত্র ধর্ম ইসলাম প্রায় ১৫০০ বছর আগে যে পদ্ধতি উপহার দিয়েছিল আজ তা উত্তম শরীরচর্চা হিসেবে প্রমাণিত। একজন বিখ্যাত চিকিৎসক স্নায়ুর দুর্বলতা, জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা এবং অন্যান্য মাংসপেশীর ব্যাধির জন্য অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। তারপর নামাজের দ্বারা ভালো হয়ে উঠেছেন। (সূত্রঃ প্রফেসরস্‌ কারেন্ট এফেয়ার্স) তিনি এক পর্যায়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ সেবন পরিত্যাগ করেছিলেন এবং নিয়মিত নামাজ আদায় দ্বারা সুস্থ হলেন। এ ঘটনা থেকে ওই চিকিৎসক শিক্ষা নিলেন এবং তার প্রত্যেক মুসলিম রোগীকে যারা, চলাফেরায় সক্ষম তাদের নামাজ পড়তে বলেন। নামাজের প্রতিটি রুকু ও সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে তার বেশিরভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করতে লাগল।
এরপর ডাক্তার সাহেব নামাজ দ্বারা যেসব রোগ নিরাময় হয় তার একটি তালিকা তৈরি করলেন।
নামাজ দ্বারা আটটি রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সেগুলো হলোঃ
১. মানসিক রোগ
২. স্নায়ুবিক রোগ
৩. অস্থিরতা, ডিপ্রেশন
৪. মনস্তাত্ত্বিক রোগ
৫. হার্টের রোগ
৬. জোড়ায় ব্যথা
৭. ইউরিক অ্যাসিড থেকে সৃষ্ট রোগ এবং
৮. পাকস্থলী ও আলসারের রোগ।
এ তালিকা তৈরি করেছেন একজন বিখ্যাত ফিজিশিয়ান, কোনো মৌলভী সাহেব নন। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ পড়লে আল্লাহ্‌ খুশি হবেন, আমরা জান্নাতবাসী হব, না পড়লে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে এটা ভাবলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
সবশেষে ইউরোপের এক ব্যক্তির ভ্রমণ কাহিনীর কিছুটা বিবরণ তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন, আমি একদিন নামাজ পড়ছিলাম আর এক ইংরেজ দাঁড়িয়ে তা দেখছিল। আমার নামাজ পড়া শেষ হলে সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখন যেভাবে ব্যায়াম করলে তা নিশ্চয়ই আমার লেখা বই থেকে জেনেছ, কেননা আমি এ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের কথা লিখেছি।’ আমি বললাম, আমি তো মুসলমান। আমার ধর্ম ইসলাম আমাকে রোজ পাঁচবার এভাবে ধর্মীয় কাজের আদেশ দিয়েছে। আমি আপনার কোনো ব্যায়ামের বই পড়িনি। সেই ইংরেজ তখন অবাক হয়ে বলল, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে সে কখনো দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবে না।’ পরে ওই ইংরেজ ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নিতে লাগল।


 
 যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

নামাজ জান্নাতের চাবি !!!

                 بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

নামাজ দ্বীন ইসলামের মূল স্তম্ভ, বান্দার জন্য আল্লাহ পাকের দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার, বিশ্বাসের দলিল, পুণ্য কাজের মূল, সর্বোত্তম ইবাদত, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী, মুক্তি ও নাজাতের পূর্বশর্ত এবং ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। নামাজে আল্লাহ তায়ালা ও বান্দার মাঝে এক অতি মহিমান্বিত, অতুলনীয় ও বিস্ময়কর মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
সৃষ্টি জগতে মানুষের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান আর কেউ নেই। মানুষের চেয়ে বেশি সম্মানী হলেন একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনি জ্ঞান, শক্তি-ক্ষমতা, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি সব দিক থেকে মানুষের ওপরে। তাই মানুষকে অবশ্যই আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষ আর যার সাথেই যোগাযোগ করুক, সবাই মানুষের চেয়ে জ্ঞান, শক্তি ও সম্পদে নিুমানের। এদের সাহচর্য মানুষের মানগত দিক বিনষ্ট করবে। মানুষ নিচে নামতে থাকবে। এক পর্যায়ে সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যাবে। আল্লাহর সান্নিধ্যই মানুষকে সীমাহীন উন্নতি ও উৎকর্ষের পথে চলতে সাহায্য করে। আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের পরই মানুষ কেবল শতভাগ পরিতৃপ্ত হয়, শান্ত ও আশ্বস্ত হয়।
পার্থিব জীবনে নানা প্রয়োজনে অসংখ্য জিনিস ও বিষয়ের সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ি। কত মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে হয়! এসব সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতার মধ্যে প্রচণ্ড আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। একটু-আধটু করে মানুষ এ আকর্ষণের মধ্যে ডুবে যায়। এক সময় তার অজান্তেই তার মহান প্রভুর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার মোহে মানুষ যেন প্রভুহীন হয়ে না যায়, সে জন্য নামাজ এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শত ব্যস্ততা, হাজারো সংশ্লিষ্টতা, নানা ধরনের কাজকর্ম ও সম্পর্ক-সম্বন্ধের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে মহান রবের সান্নিধ্য লাভের এক অনুপম সুযোগ করে দেয় এ নামাজ। আল্লাহপ্রিয় মানুষদের জন্য নামাজ তাই সবচেয়ে বড় নেয়ামত। নামাজই তাদের আল্লাহর কথা ভুলে যেতে দেয় না।
- নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়।
- নামাজ দ্বীন ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ।
- নামাজ মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য।
- নামাজ বিচার দিবসে প্রথম জিজ্ঞাসার বিষয়।
- নামাজ পুরুষ-মহিলা, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ সবার জন্য প্রযোজ্য।
- নামাজ সর্বাধিকবার ও আজীবনের জন্য প্রযোজ্য।
- নামাজ অতীব সাধারণ, সহজ, প্রাকৃতিক ও চমৎকার বিষয়।
- নামাজ কাজের একঘেয়েমি, বিরক্তি ও ক্লান্তি দূর করে।
- দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এমনভাবে সাজানো আছে যে মানুষের কর্মসাধ্যের পরিমাণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর সে কর্মবিরতির সুযোগ পায়।
- সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য তারা নামাজের হেফাজত করে।
- নামাজ জান্নাতের চাবি।
- নামাজ চক্ষুর শীতলতা ও প্রাণের শান্তি।
- সঠিকভাবে নামাজ আদায় জাহান্নাম হারাম করে।
- নামাজ কিয়ামতের দিনের নূর, ঈমানের দলিল, বাঁচার উছিলা।
- নামাজ আল্লাহর জিম্মাদারিতে চলে যাওয়ার সুযোগ।
- মানুষের জীবন বাধাহীন নয়। আমাদের জীবন বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা কেবল আল্লাহই সমাধান করতে পারেন।
- নামাজি ব্যক্তি তার দৈনন্দিন কার্যকলাপ পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে সম্পাদন করে এবং সব কাজের দায়-দায়িত্ব আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে।
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এভাবে আমাদের জীবনকে আল্লাহর হেফাজতে কাটানোর বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
আরবি হরফ মাত্র ২৯টি, জীবন-জীবিকার তাগিদে কত কিছু শিখলাম, পড়লাম, জানলাম, আমি যে নামাজ পড়ি বা আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য এবং জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য সর্বোপরি দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য হলেও আমাকে কুরআন শিখতে হবে। কুরআন শেখার ব্যাপারে ইচ্ছে, সঙ্কল্প ও প্রচেষ্টা না চালালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে কি না তাও ভেবে দেখতে হবে।


 
  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

সালাত আদায়ের ধারাবাহিক পদ্ধতি

                 بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

পদ্ধতির গুরুত্ব :
আমাদের প্রিয় রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছো ,ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো। ’ ( সহীহ বুখারি ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্ম্‌দ সা. যেভাবে সালাত আদায় করেছেন এবং যেভাবে আদায় করতে বলে গেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করতেহবে।
নিয়মের ধারাবাহিকতাকে বলা হয় তরতীব। সালাত আদায়ে তরতীব রক্ষা করা ফরয।
এখানে সালাত আদায়ের ধারাবাহিক নিয়ম পেশ করা হলো।এখানে সালাত আদায়ের ধারাবাহিক নিয়ম পেশ করা হলো এখান থেকে আমরা জানতে পারবো সালাতের আরকান আহকাম কোন্‌টির পরকোনটি ?
সালাতের ধারাবাহিক নিয়ম বা পদ্ধতি
সালাত আদায়ের ধারাবাহিক পদ্ধতি হলো :
১.সময় অনুযায়ী সালাত আদায় করা।
২.দৈহিক পাক পবিত্র হওয়া।
৩. অযু করা।
৪. পরিধানের কাপড় চোপড় পাক থাকা।
৫.সালাতের জায়গা পাক থাকা।
৬. সতর ঢাকা।
৭. নিয়্যত করা। (নিয়্যত মানে এখন কোন ওয়াক্তের কোন সালাত আদায় করবো মনে মনে তা স্থির করা।)
৮. কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো ।
৯. “আল্লাহু আকাবার ’বলে সালাত শুরু করা।এটিকে ‘তাকবীরে তাহরীমা’বলা হয়।
১০. বুকে বা নাভিতে হাত বাঁধা।
১১.সানা পড়া।
১২.‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’পড়া।
১৩.‘বিসল্লাহির রাহমানির রাহীম’পড়া।
১৪.সূরা ফাতিহা পড়া।
১৫.সূরা ফাতিহা শেষ করে ‘আমীন’ বলা।
১৬.সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা কিরাত পড়া।
১৭.‘আল্লাহু আকবার’বলে রুকূ করা।
১৮.রুকূতে তাসবীহ পড়া (সূবহানা রাব্বিয়াল আজিম)
১৯.‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’বলে থেকে উঠা।
২০.রুকূ থেকে উঠে ‘রাব্বানা হামদ’বলে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়ানো।
২১.‘আল্লাহু আকবার’ বলে সাজদায় যাওয়া।
২২.সাজদায় নাক,কপাল,দুই হাঁটু,দুই হাতের তালু ও দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগযমীনে স্থাপন করা।
২৩.সাজদায় তাসবীহ পড়া (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা)।
২৪.‘আল্লাহু আকবার’বলে সাজদা থেকে উঠে কিছুক্ষণবসা।
২৫.প্রথমটির মতো আরেকটি সাজদা করা।
২৬.দুই সাজদার মাঝ খানে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও ক্ষমা চাওয়া।
২৭.দ্বিতীয় সাজদা শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার ’বলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
২৮.প্রথম রাকাতের মতোই সূরা ফাতিহা,কিরাত,রুকু ওসাজাদা সহ দ্বিতীয় রাকাতআদায় করা।
২৯.দ্বিতীয় রাকাতে দুই সাজদা শেষ করে উঠে বসা এবং বসে আত্তাহিয়্যাতু.... পড়া।
৩০.চার রাকাত বা তিন রাকাতের নামায হলে ‘আত্তাহিয়্যাতু শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার’বলে দাঁড়ানো।
৩১.বাকি রাকাতগুলো প্রথমদুই রাকাতের মতো আদায় করা। তবে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা কিরাত পড়ার প্রয়োজন নেই।
৩২. শেষ বৈঠকে ‘ আত্তাহিয়্যা ’ এবং নবীর প্রতি ‘ দরূদ’ পাঠ করা।
৩৪ .সালাম ফেরানেরা পূর্বে দোয়া করা।
৩৫. ‘ আসসালুমু আলাইকুম ওয়ারাহ মাতুল্লাহ’ বলে ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা।



 
 যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

কলবী নামায, রূহানী নামায

                         بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

১৪৩৩ হিজরী ৯ সফর আদীব হুজুর হযরত মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ  সাহেব [দামাত বারাকাতুহুম] মাদরাসাতুল মদীনার ছাত্রদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
তোমরা নামাযের ইহতিমাম কর। নামায হল আল্লাহর সাথে মিলনের মাধ্যম। নামাযে দাঁড়ালে যদি কলবের মধ্যে কাইফিয়ত পয়দা না হয় তাহলে নামায আর নামায হল না। দেখ, একটা হল, আইনের নামায। আরেকটা হল কলবী নামায। আরেকটা হল রূহানী নামায। প্রথম নামায আমরা সবাই পড়ছি। আইনের ভাষায় এই নামায সম্পর্কে বলা হবে-জাযাত ছালাতুহু, কিন্তু ফেরেশতা বলবে, তোর নামায তোর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলাম। (কারো কারো তো এই দায়সারা নামাযও হয় না। তাড়াহুড়ো করে অযু করে। অযুর অঙ্গগুলি পুরোপুরি ধোয়া হয় না। এই নামায সম্পর্কে আইনও বলবে-মা জাযাত ছালাতুহু।) কলবী নামায হলে ফেরেশতারা এই কথা বলে না। বরং নামায মুসল্লীকে দুআ দিয়ে ফেরেশতাদের সাথে আসমানে চলে যায়।
প্রথম প্রকারের নামায দ্বারা মানুষ শুধু ফরযের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়। কিন্তু খুশু-খুযুবিহীন এই নামায কঙ্কালসার দেহের মতো। যা বিছানায় পড়ে থাকে। নিজে নড়তে পারে না। পাশ ফিরিয়ে দিতে হয়। মেডিক্যালের ভাষায় সে যিন্দা। কিন্তু জীবনের ভাষায় সে যিন্দা নয়। বরং মৃতের চেয়েও অধম। যদি কলবকে হাযির রেখে, আল্লাহ তাআলাকে চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েছি এই অনুভূতি নিয়ে নামায পড়তে পারি তাহলে কলবী নামায হবে।
এই নামায মুসল্লীকে দুআ দিয়ে আসমানের দিকে যাবে। কিন্তু এই নামাযের চেয়ে উঁচু স্তরের নামায হল রূহানী নামায। এটা মূলত কলবী নামাযেরই উঁচু স্তর। এই নামাযে নামাযের কিয়াম, কিরাত, রুকু-সিজদা, দুআ ও তাসবীহতে এক কথায় নামাযের সকল রোকন ও সকল কাজে নামাযীর আত্মা-রূহ শান্তি লাভ করে। তার ভিতরে ঝিরঝির বাতাস বইতে থাকে। সে মেরাজের স্বাদ পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মেরাজ থেকে নামায নিয়ে এসেছেন, সেই মেরাজের স্বাদ পায়। এটা এক মহাসম্পদ। এটা হাসিল হবে আল্লাহর রাসূলের অনুসরণের মাধ্যমে।
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অযু করে এরপর দুই রাকাত নামায পড়ে, যাতে সে অমনোযোগী হয় না, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯০৫
হযরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে কেউ উত্তমভাবে অযু করে এরপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামায পড়ে। যাতে তার চেহারা ও হৃদয় নামাযের প্রতি নিবিষ্ট থাকে তাহলে সে নিজের জন্য (জান্নাতকে) অবধারিত করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৩৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬৯
পক্ষান্তরে হযরত মুত্তালিব ইবনে আবু ওদাআহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামায হল দুই দুই রাকাত করে। প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ পড়বে, বিনয় ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে এবং নতশিরে বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। যে এরূপ করে না তার নামায অসম্পূর্ণ।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১২৬৯
দেখ, একদল মানুষ আছে, যারা রূহানী শব্দ যোগ করে শরীয়ত থেকেই বের হয়ে যায়। নতুন শরীয়ত আবিষ্কার করে। কলবী নামায, রূহানী নামাযের পরিভাষা ব্যবহার করে মুতাওয়ারাছ নামাযের অস্বীকার করে। ঐটা আসলে রূহানী নয়। ঐটা হচ্ছে নফসানী।  আমরা যা বলছি তা হল, মুতাওয়ারাছ নামাযেরই মানবী এবং বাতেনী দিক, যা কুরআন-সুন্নাহরই শিক্ষা। আর এর মাধ্যমেই তোমার নামায রূহানী নামাযে উন্নীত হতে পারে।
নামায যারা পড়ছে না তাদের থেকে আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো। ভালো মানে আমদের গুণ নয়। আল্লাহর দয়া। এটারও শোকর আদায় করি। এতটুকু নামায যদি পড়তে না পারতাম! কিন্তু দুনিয়ার বিষয়ে মানুষ সন্তুষ্ট হয় না। দুনিয়ার বিষয়ে মানুষ শুধু উপরের দিকে তাকায়। তাহলে আখিরাতের বিষয়ে কেন আমরা উপরের দিকে তাকাব না। কেন আমরা আমাদের নামাযকে কলবের নামাযে এবং কলবের নামায থেকে রূহের নামাযে উন্নীত করার চেষ্টা করব না। কেন আমরা মেরাজওয়ালা নামায পড়ার চেষ্টা করব না। চেষ্টা করলে আল্লাহ তাআলা কখনো বঞ্চিত করবেন না। আল্লাহর রাসূলের সুন্নত মোতাবেক চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশ্যই দান করবেন।



 
যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

আপনার কি মন খারাপ ?

                                     بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

আপনার কি মন খারাপ?
অথবা আপনার কি বেশীর ভাগ সময় মন বিষন্ন থাকে? তাহলে এখনি বাসায় গিয়ে পাক পবিত্র হয়ে ২ রাকাত নফল নামাজ এবং পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করুন ,
বসে বসে কিছুক্ষণ পরকালের কথা চিন্তা করুন এবং
সকলের সাথে নিচু কন্ঠে বিণীত হয়ে কথা বলুন, 
দেখবেন আল্লাহর রহমতে আপনার মন ভাল হয়ে যাবে ।
ইনশাআল্লাহ ।



 
যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !