তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে-
তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার
স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীছ অন্বেষণের সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক
চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর
পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও
ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের
জন্য জাহাজে আরোহন করলে চোরও তাঁর সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে
চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল
অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার
একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে
থলেটির ধরণও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও
কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে
সক্ষম হয়।
মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর চেক করা
শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে ইমাম বুখারী চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। চোরের
উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি ভাবলেন এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো
আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্র পাওয়া যাবে আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত
হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবে না। আর আমি
যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে,
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার
সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীছ সংগ্রহ করেছি, তাও
লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং পবিত্র ইলমে হাদীছের অবমাননা হবে। এই
কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূলের
হাদীছে মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখার সিদ্বান্ত গ্রহণ করলেন।
তাই তল্লাশ
কারীগণ তাঁর শরীরে তল্লাশি চালানোর আগেই অতি গোপনে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রাসহ
থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন। এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক
পর্যায়ে ইমাম বুখারীর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের
ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল না।
পরিশেষে জাহাজের লোকেরা
চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি প্রদান
করলো এবং আল্লাহ্ তাআলা তাকেই অপদস্ত করলেন। পরে চোর তাঁর সাথে একান্তে
মিলিত হয়ে বললঃ জনাব আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আপনি কোথায়
রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে
দিয়েছি।
আল্লাহ্ তাআলা ইমাম বুখারী এবং তাঁর সংগ্রহীত সহীহ হাদীছের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলেন।
0 comments
Post a Comment
Thanks for comment