Showing posts with label জীবনী. Show all posts
Showing posts with label জীবনী. Show all posts

Monday, 16 April 2012

ইমাম বুখারী (রহ)- হাদীসের জন্য হাজার স্বর্ণ মুদ্রার মায়া ত্যাগ করলেন যিনি



তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে-

 

 তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীছ অন্বেষণের সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহন করলে চোরও তাঁর সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির ধরণও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর চেক করা শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে ইমাম বুখারী চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। চোরের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি ভাবলেন এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্র পাওয়া যাবে আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবে না। আর আমি যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীছ সংগ্রহ করেছি, তাও লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং পবিত্র ইলমে হাদীছের অবমাননা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূলের হাদীছে মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখার সিদ্বান্ত গ্রহণ করলেন।

তাই তল্লাশ কারীগণ তাঁর শরীরে তল্লাশি চালানোর আগেই অতি গোপনে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রাসহ থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন। এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক পর্যায়ে ইমাম বুখারীর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল না।

পরিশেষে জাহাজের লোকেরা চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি প্রদান করলো এবং আল্লাহ্ তাআলা তাকেই অপদস্ত করলেন। পরে চোর তাঁর সাথে একান্তে মিলিত হয়ে বললঃ জনাব আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আপনি কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি।

                 আল্লাহ্ তাআলা ইমাম বুখারী এবং তাঁর সংগ্রহীত সহীহ হাদীছের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখলেন।



Saturday, 14 April 2012

হযরত ওমর (রাঃ) এর অমূল্য কিছু উক্তি

**হযরত ওমর (রাঃ) এর অমূল্য কিছু বাণী-


*দূরবর্তী নদীতীরে চর্মরোগগ্রস্ত একটি ছাগী যদি মালিশ করার মত একটু তেলের অভাবে কষ্ট পায়, তবে হাশরের দিন সে সম্পর্কেও রাষ্ট্রপ্রধানকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

* কোন ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে পড়ে, তবে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব সরকারী কোষাগারকে বহন করতে হবে।


*বাকিতে ক্রয় করে যে পোষ্যপালন করেছে, সে ব্যক্তি যদি ধনবান ও অপরাধী না হয়ে থাকে, তবে তা
র সে ধার সরকারী কোষাগার থেকে পরিশোধ করে দাও।

*তোমাদের শাসক হিসেবে আমি হলাম সে ব্যক্তির মত, যেমন কিছু লোক একত্রে সফর করার সময় টাকা-পয়সাগুলো একজনের হাতে জমা দিয়ে বলে- তোমাকে আমাদের প্রয়োজনাদি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো - দায়িত্বপ্রাপ্ত সে ব্যক্তির কি খরচের ব্যাপারে তারতম্য করার সু্যোগ আছে? তেমনি খিলাফতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কারও প্রতি তারতম্য করার অধিকার আমার নেই।

*কারও কোন প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে এসো। আল্লাহ আমাকে তোমাদের সকলের কোষাগারের রক্ষক ও বণ্টনকারী বানিয়েছেন।

*রাষ্ট্রের কোষাগারে যা আছে, তা জনগনের আমানত এবং তাদের কল্যানের জন্যই সঞ্চিত। যে পর্যন্ত জনগণের প্রয়োজন পূর্ণ না হবে, সে পর্যন্ত আমাদেরকে খরচ করতে হবে। যদি কোষাগার শূন্য হয়ে যায়, তবে কষ্টের জীবন সকলে মিলে ভাগ করে নেব।

* আল্লাহর শপথ করে বলছি- আমি বাদশাহ নই যে, জনগনকে গোলাম বানিয়ে রাখব। আমি আল্লাহর একজন বান্দা মাত্র। আমাকে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে। এটি একটি আমানত, আমার দায়িত্ব হল জনগনের সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা । যদি এ দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারি, তবেই আমার কৃতকার্যতা। আর যদি আমি শাসন কর্তৃত্বকে নিজের ইচ্ছাধীন করে নিই এবং জনগনকে তাদের প্রয়োজনের জন্য আমার পেছনে হাঁটাহাঁটি করতে বাধ্য করি, তবে আমার ফলশ্রুতি হবে জঘণ্য।
*শাসকরা যখন বিগড়ে যায় তখন জনগনও বিগড়াতে শুরু করে। সর্বাপেক্ষা ইতর সে ব্যক্তি যার প্রভাবে তার অধীনস্থদের মধ্যে অনাচার বিস্তার লাভ করে।

* যে তোমার সামনে দোষ ধরে সেই প্রকৃত বন্ধু, আর যে সামনে প্রশংসা করে সেই শত্রু ।

* যে আমার দোষ দেখে অনুগ্রহ করে তা আমাকে জানায় তাঁর প্রতি আল্লাহর করুণা অশেষ ধারায় বর্ষিত হোক।

 

       [[গ্রন্থ- "বিশ্বনবী (সাঃ) ও চার খলিফার জীবনী", মূল লেখকঃ আল্লামা তালিবুল হাশেমী , অনুবাদকঃ মরহুম হাফেজ            মুফতী   মোহাম্মদ নূর উদ্দিন]]

Sunday, 11 March 2012

একজন অখ্যাত মানুষের গল্প

               بِسْــــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ اارَّحِيم

টিউন  : rahat
ফেব্রুয়ারী মাস ভাষার মাস। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করছি আজকের টিউন। প্রিয় টিউনার ভাই বন্ধুগন আসসালাময়ালিকুম।
একজন অখ্যাত মানুসের গল্প। মানুষটার নাম- আব্দুস সাত্তার (আমি তাঁকে চাচা বলেই ডাকতাম), জন্ম কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার মহালক্ষীপাড়া গ্রামে আনুমানিক ১৯৪৫-১৯৫০ এর মধ্যে। আমিও ইনার গ্রামের ই একজন মানুষ। আব্দুস সাত্তার চাচার জন্ম হয়েছিল একটা কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবার জমিজমা ছিল খুবই কম। চাচা পড়াশোনা খুব একটা করতে পারেননি। ক্লাস ফোর / ফাইভ পর্যন্ত পড়েছিলেন (আমার আব্বুর মুখ থেকে শোনা)। আমি আব্দুস সাত্তার চাচাকে আমার ছোট বেলায় দেখেছি। তাঁর চুল দাড়ি পাকা ছিল। ছোট খাট হাসি খুশি প্রানবন্ত মানুষ। তিনি আজ নেই কিন্তু তাঁর হাসিটা আমার এখনো চোখে ভাসে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তখন ও আমাদের গ্রামে একটা প্রাইমারি স্কুল ছাড়া আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তখন আমাদের গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি এবতেদায়ি মাদ্রাসা গড়ে তুলেন যা আজকের “মহালক্ষীপাড়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা”। সেই মাদ্রাসায় দপ্তরি পদে নিয়োগ পান আব্দুস সাত্তার চাচা। তিনি খুব বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি কিন্তু পড়াশুনা খুব ভালবাসতেন। তিনি মাদ্রাশাটা কে তাঁর সন্তানের মতই ভালবাসতেন। তাঁর জীবনের অর্ধেকটা সময়ই মাদ্রাসার পেছনে কাটিয়েছেন। সচ্ছলতার অভাবে টাকা পয়সা দিতে পারেননি কিন্তু নিজে খেটে রাত বিরাতে এখানে ওখানে ঘুরে বুদ্ধি পরামরশ করতেন কিভাবে মাদ্রাশার উন্নয়ন করা যায়। আজকের “মহালক্ষীপাড়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা” এর পিছনে তাঁর আবদান অবিশরনিয়। আমি চাচার সাথে খুব বেশি সময় কাটানর সুজুগ পাইনি। আমার বাবা ছিলেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি। তাই আমাদের বাড়িতে চাচার যাতায়ত ছিল। চাচা ছিলেন কর্ম অন্ত প্রান, মাদ্রাসার কোন কাজে তিনি কখনও না করতেননা।
আমাদের সবার প্রিয় আব্দুস সাত্তার চাচা আজ এর নেই। তিনি গত ১৯ই জানুয়ারী ২০১২ ইং তারিখে মারা যান (ইন্নলিল্লাহে... ... রাজেউন)।

আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এই জন্য যে আমি তাঁর জানাজা নামাজে সরিক হতে পেরেছিলাম। সেদিন ছিল শুক্রবার, জুম্মার নামাজের পর আমাদের গ্রামের হাইস্কুল মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমি আমাদের গ্রামের অনেক জ্ঞানী গুণী উচ্চ পদস্ত প্রভাবশালি মানুশের জানাজার অনুষ্ঠান দেখিছি কিন্তু এত ও লোকের সমাগম দেখিনি। আব্দুস সাত্তার চাচার মিরতুতে গ্রামে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। মানুষ যে তাকে কত ভালবাসত আমি সেদিন তা উপলব্ধি করতে পারি। মানুষ যে নগণ্য পদে থেকেও সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারে তাঁর থেকে উৎকৃষ্ট উদাহরন আর কি হতে পারে?
আব্দুস সাত্তার চাচার জানাজা নামাজে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি এবং মোনাজাতের সময় সকলের কান্নার রোল সেখানে যে পরিস্থিতির তৈরি করেছিল তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নাই। আব্দুস সাত্তার চাচার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সময় সবাই তাঁর প্রতি যে স্রদ্ধা ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তা অকল্পনীয়। একজন মানুষের জীবনে এর বেশি কিছু লাগে না।
চাচার হাঁসি মাখা মুখটা আমার আজও চোখে ভাসে। কিছু কিছু মানুষ কে আমরা মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেলি কিন্তু আমরা তা অনুভব করতে পারি না। যখন তাদের হারিয়ে ফেলি তখন আমরা বুঝতে পারি আমরা কি হারালাম।

আব্দুস সাত্তার চাচা একজন স সৎ, আদর্শবান, বিদ্যানুরাগি এবং দেশ প্রেমিক ছিলেন। চাচার আত্মার শান্তি কামনা করি। আপনারা চাচার রুহের মাগফেরাতের জন্য দুয়া করবেন।
কর্মের মাঝেই মানুষ বেঁচে থাকে। আসুন দেশ এবং মানুষের সেবায় সাধ্যমত নিজেকে নিয়জিত করি।