Showing posts with label নামাজ. Show all posts
Showing posts with label নামাজ. Show all posts

Thursday 12 April 2012

সহীহ্‌ সুন্নাহ্‌র আলোকে বিতর নামাজ [শেষ অংশ]

                               بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم


এই যঈফ হাদীছ দু’টি বাদ দিলেও যে দলীল সমূহ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তা দ্বারা একথা প্রমাণ হওয়া যথেষ্ট যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত।
তাছাড়া পূর্বে উল্লেখিত ইবনে ওমর ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতর নামায ফরযের মত নয় বরং উহা সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছেঃ
৫) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সেদিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন।
আর জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছেযে, আরোহী যে দিকেই যাক না কেন রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিকেই মুখ করে তার উপর বসে নফল নামায আদায় করতেন। কিন্তু ফরয নামায আদায়েরইচ্ছা করলে অবতরণ করতেন এবং কিবলা মুখী হয়ে নামায আদায় করতেন।
সুতরাং বিতর নামায যদি ফরয বা ওয়াজিব হত তবে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনই তা আরোহীর উপর বসে পড়তেন না।
৬) অনুরূপভাবে কোন ফরয বাওয়াজিব নামাযের রাকাত সংখ্যায় মুছল্লীকে এমন কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নিযে, মনে চাইলে এত রাকাত পড়বে বা পড়বে না। কিন্তু সুন্নাত-নফল নামাযের রাকাতের ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন বিতর নামাযের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوِتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّأَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلاثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ
আবু আইয়্যুব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলামনের উপর হক হচ্ছে বিতর নামায আদায় করা। অতএব যে পাঁচ রাকাত বিতর পড়তে চায় সে পাঁচ, যে তিন রাকাত পড়তে চায় সে তিন এবং এক রাকাত বিতর পড়তে চায় সে এক রাকাত পড়তে পারে।
এই হাদীছ থেকে বুঝা যায়, যদি বিতর নামায ফরযের মত অবশ্যই পড়তে হবে এমন নামায হত, তবে নির্দিষ্ট করে তার রাকাত সংখ্যা বেঁধে দেয়া হত এবং কখনই তা মুছল্লীর ইচ্ছা-স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দেয়া হত না।
অবশ্য বিতর নামায ওয়াজিবনা হলেও তা বিনা কারণে ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে অলসতাকরা কোন মুমিন ব্যক্তির উচিত নয়। কেননা উহা একটি লাল উট তথা মূল্যবান সম্পদের চাইতে বেশী উত্তম।
বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলার পক্ষে দলীল এবং তার জবাবঃ
নিম্নে ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে এমন দলীল সমূহ উল্লেখ করে তার জবাব প্রদান করা হচ্ছেঃ
১) আমর বিন আস (রাঃ) একদা জুমআর খুতবা প্রদান কালেবলেন, আবু বাছরা (রাঃ) আমার কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ زَادَكُمْ صَلاةً وَهِيَالْوِتْرُ فَصَلُّوهَا فِيمَا بَيْنَ صَلاةِ الْعِشَاءِ إِلَى صَلاةِالْفَجْرِ
নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরজন্য একটি নামায বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। উহা হচ্ছে বিতর নামায। তোমরা উহা ফজর ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায় কর।
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ট মুহাদ্দিছ ও আলেম আল্লামা শায়খ আলবানী তাঁর বিখ্যাত হাদীছের সংকলন ‘সিলসিলা ছহীহা’ (১/২২২) গ্রন্থে এই হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন,
‘এই হাদীছের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী বিতর নামাযওয়াজিব প্রমাণিত হয়। হানাফী আলেমগণ একথাই বলেন। কিন্তু ইহা জমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের বিপরীত মত। অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা যদি একথা প্রমাণিত না হত যে, দিন-রাতে শুধুমাত্র পাঁচওয়াক্ত নামাযই ফরয এর বেশী নয়, তবে হানাফী ভাইদের কথা অধিক বিশুদ্ধপ্রমাণিত হত।’ তিনি আরো বলেন, ‘হানাফী বিদ্বানগণ তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, বিতর নামায হুবহু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মত ফরয নয়। উহা ফরয ও সুন্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি আবশ্যকীয় আমল। এই আমলটি প্রমাণের দিক থেকে ফরযেরচাইতে নিম্নে কিন্তু তাগিদের দিক থেকে সুন্নাতের চাইতে অধিক শক্তিশালী।
জেনে রাখা আবশ্যক যে, হানাফী মাযহাবের এই পরিভাষাটি তাদের নিজস্ব এবং সম্পূর্ণ নতুন। ছাহাবায়ে কেরাম বা পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ তার সাথে পরিচিত ছিলেন না। এই পরিভাষা মতে ওয়াজিব বিষয় মর্যাদা, গুরুত্ব ও প্রতিদানের ক্ষেত্রে ফরযের চাইতে কম।
তাদের এই কথানুযায়ী এর অর্থ দাঁড়ায়: ক্বিয়ামত দিবসে বিতর নামায পরিত্যাগকারীর শাস্তি হবে ফরয নামায পরিত্যাগকারীর চাইতে কম।এই সময় তাদেরকে আমরা বলবঃ যে লোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অতিরিক্ত কোন নামায আদায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় কথা বলে, কিভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে বলতে পারেন, লোকটি মুক্তি পেয়ে যাবে।?
কিভাবে শাস্তির সাথে মুক্তি একত্রিত হতে পারে? কোন সন্দেহ নেই যে,নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উক্ত বাণীই এটা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয়। আর এ জন্যই অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম ঐকমত্য হয়েছেন যে, বিতর নামায সুন্নাত; উহা ওয়াজিব নয়। আর এটাই হক ও ধ্রুব সত্য।


 
  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

সহীহ্‌ সুন্নাহ্‌র আলোকে বিতর নামাজ [অংশঃ ০২]

                 بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

সুতরাং বলা যায়, ইহা ছাহাবায়ে কেরামের ‘এজমা সুকূতী’ বা নীরব ঐকমত্য। হাদীছ শাস্ত্রে একথা সকলের জানা যে, কোন ছাহাবী যদি বলেন, সুন্নাত হচ্ছে এই রকম ... তবে উহা মারফূ হাদীছ হিসেবে গণ্য।
২) কেনানা গোত্রের মুখদাজী নামক এক ব্যক্তিশামে বসবাসকারী আবু মুহাম্মাদ নামে পরিচিত জনৈক ব্যক্তির নিকট থেকেশুনলেন, তিনি বলছেন যে, বিতর নামায ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, কথাটি শুনে আমি ছাহাবী উবাদা বিন ছামেতের (রাঃ) নিকট গেলাম। তিনি তখন মসজিদে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে আবু মুহাম্মাদের কথাটি বললাম। তিনি বললেন, আবু মুহাম্মাদ ভুল কথা বলেছে। কেননা আমি শুনেছিরাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামায বান্দাদের উপর লিখে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই নামাযগুলোকে হালকা মনে করে তার অধিকার ক্ষুন্ন করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে অঙ্গিকার। তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি এই নামাযগুলো আদায় করবে না তার জন্যে আল্লাহর কাছে কোন অঙ্গিকার নাই। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।
৩) ত্বলহা ইবনে উবাউদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرُ الرَّأْسِ نَسْمَعُ دَوِيَّ صَوْتِهِ وَلا نَفْقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلامِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِوَاللَّيْلَةِ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُنَّ قَالَ لا إِلا أَنْ تَطَّوَّعَ وَصِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ فَقَالَ لا إِلا أَنْ تَطَّوَّعَ وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الزَّكَاةَ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا قَالَ لا إِلاأَنْ تَطَّوَّعَ قَالَ فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لا أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلا أَنْقُصُ مِنْهُ فَقَالَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَحَ إِنْصَدَقَ
একদা নজদের অধিবাসী এক বেদুঈন (ছাহাবী রাঃ) মাথার চুল উস্কু-খুস্কু অবস্থায় গুনগুন করে দুর্বধ্য কিছু কথা বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে এলো। নবীজীর নিকটবর্তী হয়ে ইসলাম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করল। তিনি(ছাঃ) বললেনঃ রাত ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করতে হবে। সে বলল: এ পাঁচ নামায ছাড়া আমার উপর অন্য কোন নামায আবশ্যক আছে কি? তিনি বললেন না, তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কোন নামায পড়তেচাও তো পড়তে পারবে। রামাযান মাসে ছিয়াম পালনকরতে হবে। সে বলল, এ ছাড়া অন্য কি ছিয়াম আমার উপর আবশ্যক কি? তিনি বললেন, না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করে থাক। এভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট যাকাতের কথা উল্লেখ করলেন। সে বলল, এ ছাড়া অন্য কিছু আমার উপর আবশ্যক কি? তিনি বললেন, না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করে থাক। তখন লোকটি সেখান থেকে উঠে গেল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর শপথ আমার উপর যা ফরয করা হয়েছে আমি তার চাইতে বেশী কিছু করবনা এবং এর থেকে কমও কিছু করব না। লোকটি যখন চলে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ লোক তার কথায় যদি সত্যবাদী হয় তবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, সে যদি সত্যবাদী হয়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এ হাদীসে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয়। কেননা যদি ওয়াজিব হত তবে লোকটি যখন প্রশ্ন করল যে, এছাড়া আমার উপর আর কোন নামায আছে কি না তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ‘না’ বলতেন না; বরং তাকে বিতর নামাযও আবশ্যকএ কথা বলতেন। তাছাড়া বিতর নামায যদি ওয়াজিব হয় তাহলে উহা না পড়লে নিঃসন্দেহে গুনাহগার হওয়ার কথা।
কিন্তু এ হাদীছে দেখা যায় লোকটি যখন আল্লাহর কসম করে বলল আমি আমার উপরফরযের অতিরিক্ত কিছু করবনা, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মুক্তির গ্যারান্টি দিয়েবললেন, ‘বাস্তবিকই লোকটি যদি সত্যবাদী হয়, ফরয ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করেতবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে’। কিভাবে একজন মানুষ ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ করে মুক্তি পেয়ে যায়? তাহলে এ হাদীছ থেকে স্পষ্টভাবে একথা কিপ্রমাণিত হয় না যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাত বা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ?
৪) ইবনু আব্বাস (রাঃ)এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআ’য বিন জাবাল (রাঃ)কে (গভর্ণর করে) ইয়ামান প্রেরণ করেন তখন বলেন,
فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ
... তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ফরয করেছেন দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায।
এ হাদীছেও প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায যদি ফরযেরমত অতি আবশ্যক হত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহা জানানোর জন্য মুআ’য (রাঃ)কে অবশ্যই নির্দেশ দিতেন। ইবনু হিব্বান বলেন, মুআ’যের ইয়ামান গমণরাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনের শেষ লগ্নে মৃত্যুর অল্প কিছু দিন পূর্বে ছিল।
যারা বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলেন, তাদের দলীলগুলো তো অবশ্যই যঈফ- যেমন এর বিস্তারিত বিবরণঅচিরেই উল্লেখ করা হবে- যদি ছহীহ ধরেও নেয়া হয়, তবে তার জবাবে বলা যায় যে, উহার বিধান ছিল পূর্বে। মুআ’যের (রাঃ) এইহাদীছ দ্বারা তা রহিত হয়ে যায়। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)
এই জন্য একটি যঈফ হাদীছে বলা হয়েছেঃ তিনটি বিষয় আমার জন্য ফরয কিন্তু তোমাদের জন্য নফল। তম্মধ্যে একটি হচ্ছেঃ বিতর নামায।
অন্য আরেকটি হাদীছে ইবনুআব্বাসের (রাঃ) বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ
أُمِرْتُ بِالأُضْحِيَّةِ وَالْوَتْرِ وَلَمْ تُكْتَبْ
আমাকে কুরবানী এবং বিতর নামাযের আদেশ করা হয়েছে।কিন্তু উহা ফরয হিসেবে লিখে দেয়া হয়নি। কিন্তু হাদীছটির সনদে ‘জাবের’ নামক বর্ণনাকারী যঈফ।


   
  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

সহীহ্‌ সুন্নাহ্‌র আলোকে বিতর নামাজ [অংশঃ ০১]

                  بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

বিতর নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ
 
দৈনন্দিন জীবনে একজন মুসলমানের উপর ইসলামের দ্বিতীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন নামাযশুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্তই ফরয; এর অতিরিক্ত নয়। এই পাঁচ ওয়াক্তে মোট ১৭ (সতের) রাকাত নামায ছাড়া আর যত নামায আদায় করার
হাদীছ পাওয়া যায় তা সবই নফলের অন্তর্ভূক্ত। ঐ সমস্ত নামাযের মধ্যে কোনটার চাইতে কোনটার গুরুত্ব বেশী হওয়ার কারণে উলামায়ে দ্বীন কোনটার নাম দিয়েছেন সুন্নাতে মুআক্কাদা, কোনটা সুন্নাতে যায়েদা এবং কোনটা সাধারণ নফল নামায।
যে সমস্ত নামায আদায় করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং তাতে অফুরন্ত ছওয়াবের উল্লেখ হয়েছে তাকে বলা হয় সুন্নাতে মুআক্কাদা নামায। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত নামায, তাহাজ্জুদ নামায, বিতর নামায, চাশতের নামায, তওয়াফ শেষ করে দু’রাকাত নামায, ঈদের নামায ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে বিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ নামায। এর গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় তা ওয়াজিবের কাছাকাছি। ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে এরকম কিছু হাদীছও পাওয়া যায় তার পক্ষে। কিন্তু এ সম্পর্কে সমস্ত হাদীছ একত্রিত করলে বুঝা যায় তা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাতে মুআক্কাদা।
বিতর নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলোহাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ
عَنْ خَارِجَةَ بْنِ حُذَافَةَ الْعَدَوِيُّ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّاللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَمَدَّكُمْ بِصَلاةٍ وَهِيَ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ وَهِيَ الْوِتْرُ فَجَعَلَهَا لَكُمْ فِيمَا بَيْنَ الْعِشَاءِ إِلَى طُلُوعِ الْفَجْرِ
১) খারেজাহ্‌ ইবনে হুযাফাহ্‌ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে একটি নামায দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চাইতে উত্তম। তা হচ্ছে বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
عَنْ عَلِيٍّ رَضِي اللَّه عَنْه قَالَ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ أَوْتِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ
২) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন এবং বলেছেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরাবিতর নামায পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামায পছন্দ করেন।
৩) রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। এমনকি সফরে গেলেওএ নামায পড়া ছাড়তেন না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ بِهِ يُومِئُ إِيمَاءً صَلاةَاللَّيْلِ إِلاَّ الْفَرَائِضَ وَيُوتِرُ عَلَى رَاحِلَتِهِ
ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহুআনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সে দিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন।
কিন্তু ফরয নামাযের সময় হলে তিনি তা বাহনের উপর পড়তেন না।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللَّهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ فَإِذَا أَرَادَ الْفَرِيضَةَ نَزَلَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আরোহী যে দিকেই যাক না কেন রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিকেই মুখ করে তার উপর বসে নফল নামায আদায় করতেন। কিন্তু ফরয নামায আদায়েরইচ্ছা করলে অবতরণ করতেন এবং কিবলামুখী হয়ে নামাযআদায় করতেন।

বিতর নামায কি ওয়াজিব না সুন্নাত?
ইমাম আবু হানিফা (রঃ)এর মতে বিতর নামায ওয়াজিব। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)সহ অধিকাংশ ইমাম, মুহাদ্দিছও আলেমের মতে বিতর নামায ওয়াজিব নয় বরং তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌।
ইমাম আবু হানীফা যে সকল হাদীসের আলোকে বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলেন, তা অধিকাংশ যঈফ বা দূর্বল অথবা তা দিয়ে এ নামাযকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায়না। তাই তাঁর প্রসিদ্ধ দু’ছাত্র ইমাম ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রহঃ) স্বীয় ইমামের সাথে একমত না হয়ে অধিকাংশ ইমামের ন্যায় এ নামাযকে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌ হিসেবে আখ্যা দেন।
এ জন্য ইবনুল মুনযির বলেন, এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার মতের সমর্থনকরেছেন এরকম কারো নাম আমি জানি না।
ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, বিতর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। এব্যাপারে মুসলমানগণ ঐকমত্য। কোন মানুষ যদি বিতর নামায পরিত্যাগ করার ব্যাপারে দৃঢ় থাকে বা অবিরাম বিতর নামায না পড়ে, তবে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
বিতর নামায যে ওয়াজিব নয় তার পক্ষে সপষ্ট দলীলঃ
১) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেনঃ
الْوِتْرُ لَيْسَ بِحَتْمٍ كَصَلاتِكُمُ الْمَكْتُوبَةِ وَلَكِنْ سَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ إِنَّ اللَّهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ فَأَوْتِرُوا يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ
বিতর নামায ফরজ নামাযের মত লাযেম ও আবশ্যক নয়; বরং সে নামায রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নত করেছেন। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বেজোড় বা একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি বিতর তথা বেজোড় নামায পছন্দ করেন এবং তাতে প্রচুর ছওয়াব দিয়ে থাকেন। সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরাবিতরের নামায পড়।
এই হাদীছটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায সুন্নাত। কারণ সেইসময় আলী (রাঃ)এর উল্লেখিত কথার কোন প্রতিবাদ কোন ছাহাবী থেকে পাওয়া যায় না। আর তিনি কথাটি তাঁদের উপস্থিতিতেই বলেছেন।



 
  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

ওযু করার সুন্নাত তরিকা

               بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

                        ওযুর সুন্নাত সমূহ হলঃ
 
                      ১.বিসমিল্লাহ্ বলে ওযু শুরু করা ।
                      ২.মেসওয়াক করা ।
                      ৩.তিনবার কুলি করা । 
                      ৪.তিন বার নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ করা ।
                      ৫.ঘন দাড়ি খিলাল করা ।
                      ৬.হাত পায়ে সমগ্র আঙ্গুল খিলাল করা ।
                      ৭.সম্পূর্ন মাথা মাসেহ্ করা ।
                      ৮.উভয় কান মাসেহ করা ।
                      ৯.তারতীবের সাথে ওযু করা ।
                      ১০.প্রত্যেক অজ্ঞ ডান দিক থেকে ধোয়া শুরু করা ।
                       ১১.একস্থান শুকোবার পূর্বেই অন্য স্থান ধোয়া ।



 
    যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !

ওযুর ফরজ সমূহ

                  بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

ওযুর ফরয চারটি ।এগুলো যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে ।এগুলোর কোন একটি অথবা নির্দিষ্ট কোন স্থানের চুল পরিমাণ জায়গা শুকনো থাকলে ওযু হবে না এবং সে অবস্থায় নামায আদায় করলে নামাযও হবেনা ।ওযুর ফরযগুলো নিম্নরূপঃ- 
ওযুর ফরয সুমূহ

১.কপালের উপর মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত সমগ্র মুখমন্ডল একবার ধোয়া ।
২. কনুইসহ দুই হাত অন্তত একবার ধোয়া ।
৩.একবার মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা ।
৪.টাখনুসহ উভয় পা অন্তত একবার ধোয়া ।
হাত ,পা এবং মুখমন্ডল একবার ধোয়া ফরয ,আর তিনবার ধোয়া সুন্নাত ।একবার যদি ভালভাবে সমগ্র স্থানে পানি না পৌছায় তবে যতবার প্রয়োজন ততবার ধোয়াও ফরয ।





 
  যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ !