Monday, 9 April 2012

একটি প্রয়োজনীয় হাদিস সবার জন্য, না পড়লে সবচেয়ে বড় মিস করবেন

                                بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 


হে নবী ! মু'মিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে এটি তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন

আর হে নবী ! মু'মিন মহিলাদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে বুক ঢেকে রাখে তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া- স্বামী, পিতা, স্বামীর পিতা, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজের মেলামেশার মেয়েদের, নিজের মালিকানাধীনদের, অধীনস্থ পুরুষদের যাদের অন্য কোন রকম উদ্দেশ্য নেই এবং এমন শিশুদের সামনে ছাড়া যারা মেয়েদের গোপন বিষয় সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ তারা যেন নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা লুকিয়ে রেখেছে তা লোকদের সামনে প্রকাশ করে দেবার উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে হে মু'মিনগণ! তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে তওবা করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে

●●●
সূরা নূর : ৩০-৩১

১৯৮৩সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী অজানা এক ইতিহাসের নাম ।

                             بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم


http://photos-a.ak.fbcdn.net/hphotos-ak-prn1/549128_333413303384779_196351987090912_915203_2021914121_n.jpg
ইসলামিক সংবাদঃ
১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে, আসামে নির্বাচন কমিশন ৪৫ হাজার বিদেশী ভোটারকে ভোটের অধিকার দেন । ঘটনারশুরুটা এখানেই। অল আসাম স্টুডেন্ট ফোরাম ঘোষণা করে বিদেশীদের ভোটার হিসাবে এদের অন্তর্ভুক্ত করলে আসামে রক্তের হলী খেলা বয়ে দেয়া হবে । শুরু হয় বাংলাদেশী খেদাওআন্দোলন। সাথে যোগ দেয় আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন।গঠন হয় All Assam GanaSangram Parishad (AGSP)।AGSP বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলনে ১৯৭৯ থেকে১৯৮২ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ এর মত খুন দেড় হাজার এর বেশী মানুষ আহত, জ্বালাও পোড়াও সহ অনেক ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন গোষনা করেন। এ নির্বাচন আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস নেত্রী ইন্দ্রাগান্ধীর হস্তক্ষেপে নির্বাচনের আয়োজন হয়। সেই দিন থেকেই আসাম অগ্নিগর্ভ ধারণ করে। AGSP নির্বাচনবয়কটের ঘোষণা দেয়। কংগ্রেস সহ কিছু দল নির্বাচনের পক্ষেও মিছিল বের হয়।... জনতা নির্বাচনের দাবিতে মিছিল করেন। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে তারা জোড় দাবিতে সোচ্ছার হন।
সারা আসামে রিউমার ছড়ানোহয় হাজার হাজার বাংলাদেশী বাংলাদেশ থেকে এসে ভোটে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য AGSP শপথ নেয়। গঠন করা হয় আলাদা আরেকটি ফোরাম। এদিকে ভোট গ্রহন চলছিলো। আসামের মরিগণ জেলার একটা অংশের কথা। সেখানে মোহাম্মাদ হোসেন নামের এক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হেমান্দ্র নারায়ণ নামের এক প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। হেমান্দ্র নারায়ণ ২৫ বছরধরে ঐ এলাকা শাসন করে আসছিলেন। এতে করে আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠা AGSP। প্রতিশোধ নেশায় পাগল হয়ে যায়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারির দিনের বেলায় মাত্র ৬ ঘণ্টায় আসামের Nellie য়হত্যা করা হয় ৫০০০ মানুষকে যার মধ্যে ৩৫০০-ইছিল শিশু(মুসলিম) এ হত্যাকান্ডের এখনো একটিরও বিচার হয়নি।
দিনের আলোয় মাত্র ৬ ঘণ্টায় হাজার হাজার শিশুর হত্যাকান্ডের বিচারের বাণী আজ নিরবে নিভৃতে কেঁদে উঠে বাববার।ইন্ডিয়া কি কোনদিন এ হত্যাকান্ডের বিচার করবে?? ইন্ডিয়া কি দিয়েমুছবে এ রক্তের দাগ? স্রষ্টার বিচার যে বড়ই কঠিন? হয়তো এটাই আজ আসামকে পোড়াচ্ছে!! গোটা ইন্ডিয়াকে পোড়াচ্ছে!! ইতিহাসে শিক্ষা যে বড়ই নির্মম।

মৃত ব্যক্তির গোসল

                                     بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 


কাফন দাফনেল জিনিস পত্রত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করে একখানা চওড়া তক্তা অথবা তক্তপোষ(গোসলের খাট)চারদিকে ৩ ,৫,৭ বার লোবান অথবা আগরবাতি দ্বারা ধূমায়িত করে তার উপর মৃত ব্যক্তিকে রাখবে ।অতঃপর তার পরিধানের সব কাপড় খুলে ফেলবে শুধু নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত একখানা কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখবে ।মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম হল সর্ব প্রথম মৃত ব্যক্তিকে ইস্তেঞ্জা করাবে ,অর্থ্যাত্ পানি দ্বারা তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে ।খবরদার ! তার সতর স্পর্শ করা যাবেনা ।মৃতকে গোসল দেওয়ার সময় হাতে কিছু কাপড়  পেঁচিয়ে নিয়ে নামাযের ওযুর মত ওযু করাবে কিন্তু কুলি করাবে না ,নাকের ভেতর পানি দিবে না বরং নাক মুখ ও কানের ভেতরের ছিদ্রে তুলা অথবা কাপড় দ্বারা বন্ধ করে দিবে যাতে ভেতরে পানি যেতে না পারে ।হাতে পাঞ্জা ধৌত করা যাবে না । ওযু শেষে তুলা বা কাপড় ভিজিয়ে দাঁতের গোড়া এবং নাকের ছিদ্র তিন বার মুছে পরিষ্কার করে দিতে পারলে এটা উত্তম । মৃত ব্যক্তি জানাবাতে অবস্থায় মারা গেলে এরূপ তুলা বা কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া ওয়াজিব । তার পর মাথা ঐ মাইয়্যেত পুরুষ হলে দাড়ি সাবান দ্বারা উত্তমরূপে ধৌত করবে ।অতঃপর বাম কাতে শুইয়ে মাথা হতে পা পর্যন্ত তিনবার এমনভাবে পানি ঢালবে ,যাতে বাম প্বার্শের নীচে পানি পৌছে যায় ।তারপর ডান প্বার্শে শয়ন করিয়ে এরূপ তিন বার পানি ঢালবে ।এরপর মৃতকে গোসল দানকারীর শরীরের সাথে ঠেক লাগিয়ে একটু বসিয়ে ধীরে ধীরে তার পেট মালিশ করবে ও সামান্য চাপ দিবে ।এতে যদি কোন বজ্র নির্গত হয় তবে তা ঢিলা দ্বারা পরিষ্কার করবে বা ধুয়ে দিবে । কিন্তু গোসল পুনরায় দিতে হবে না ।অতঃপর পাক কাপড় দ্বারা মৃত ব্যক্তির শরীরের পানি শুকিয়ে কাফন পরাবে ।মৃত  ব্যক্তিকে বরই গাছে পাতাযুক্ত গরম পানি দ্বারা গোসল করাবে ।তা পাওয়া না গেলে স্বাভাবিক পানি ও সাবান দ্বারা গোসল দিবে ।সমগ্র শরীর তিন বার ধৌত করা সুন্নত ।একবার ধৌত করলেও ফরয আদায় হয়ে যাবে ।

মৃত্যু ও আখিরাতের কথা ভাবতে হবে

                                   بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 

আল্লাহপাক মানব জীবনের জন্য তিনটি কাল সৃষ্টি করেছেন_ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি যে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানকালে প্রস্তুতি নেয় যাতে ভবিষ্যতে সঠিক পথে থাকতে পারে। যারা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেয় না তাদের জীবনে সফলতার দেখা মেলে না। আল্লাহপাকইমানুষকে এই বোধ দান করেছেন যে, পেছনের জীবনে ভুল হয়ে গেলে সে তা সংশোধন করে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়ে যায়।
অতীত জীবনে অনেক মানুষ সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী ছিল, তারা আজ কবরবাসী। অতীত জীবনে আমরা ছোট ছিলাম, বর্তমানে আমরা বৃদ্ধ, ভবিষ্যতে আমাদেরকেও কবর জগতের বাসিন্দা হতে হবে। এরপর রয়েছে অনন্তকালের এক মহাজীবন। কবর জীবন ও আখেরাতের জীবন সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা যার মাথায় সর্বদা বিরাজমান থাকে সে সফলকাম হতে পারবে। আর যদিমরীচিকাময় এই পৃথিবীর পেছনে পড়ে মৃত্যু ও আখেরাতের জীবনের কথা ভুলেবসে থাকে, তাহলে তার জীবন হবে দুর্ভাগ্যে ভরা।মৃত্যু ও আখেরাতের স্মরণইপারে মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং পশু ও তার মধ্যকার ব্যবধান ফুটিয়ে তুলতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বস্থানে, সবসময় মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর। যাতে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে পড়। মৃত্যুর স্মরণ এমন একটি বিষয় যা অন্তর থেকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার চিন্তা দূর করে, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের অযাচিত আসক্তি নষ্ট করে দেয়। সুস্থ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মাত্রই মৃত্যুর চিন্তায় বিভোর থাকে। যারা মৃত্যুরচিন্তা করে না, দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের বুদ্ধিকে সুস্থ বলা যায় কিভাবে? বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান কেউই কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় পাশে থাকবে না।
যে বান্দা মৃত্যুকে স্মরণে রেখে এই আকিদা পোষণ করে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী ও বন্ধু থাকবে না, সে দুনিয়ায় অর্থসম্পদ, বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজনকে অস্থায়ী সঙ্গীই মনে করে থাকে। নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, হামান, আবু জাহল প্রমুখ অর্থ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি বিশ্বাসী ছিল না।বর্তমান পৃথিবীতেও তাদের অসংখ্য-অগণিত অনুসারী রয়েছে যারাপুনর্জীবন সম্পর্কে বিশ্বাসী নয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, 'প্রত্যেক মানুষকেই (একদিন না একদিন) মৃত্যুরস্বাদ আস্বাদন করতেই হবে।' মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত সময় সম্পর্কে তাকে কেউ অগ্রিম জানিয়ে দেবে না। হঠাৎ করেই ফেরেস্তা এসে আত্মা বের করে নিয়ে যাবে। নির্ধারিতসময়ের চেয়ে সামান্য বিলম্ব হবে না।
মৃত্যু একটি গোপন শক্তি। এর মোকাবিলা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যার হুকুমে মৃত্যু অবধারিত হয়, যদি তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা যায়, তার প্রতি ভালো ধারণা করা যায়,তাহলে আশা করা যায় কবর পরবর্তী জীবনে দুর্ভোগের শিকার হতে হবে না।

মৃত্যুর বিভীষিকা – ৩ : কবরের আযাব

                            بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 


হযরত সামুরা বিন জুনদুব(রা) বলেন, রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই তার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতেন যে, তোমাদের মাঝে কেউ কি কোনোস্বপ্ন দেখেছ ?একদিন সকালে তিনি নিজেই বলতে লাগলেন যে, আজ রাতে আমার নিকট দুজন লোক এল এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকেনিয়ে গেল।যাওয়ার পথে আমরা শায়িত একটি লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। এই শায়িত লোকটির মাথা অপর একটি লোক পাথর দিয়ে কেচতেছিল। পাথর মারার পর মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পাথরটি দূরে ছিটকে পড়ছে। পুনরায় মারার জন্যে লোকটি পাথর সংগ্রহ করতে গেলে এই ফাকেমাথা পুনর্জন্ম নিয়ে নেয় এবং ঐ লোকটি ফিরে এসে আবার পাথর মারে। এভাবে অনবরত চলছে।
আমি আমার সাথীকে বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এই দুজন ব্যক্তি কে ? আমার সাথী বলল, আরো সামনে অগ্রসর হও।
আমরা সামনে অগ্রসর হলাম। দেখলাম একটি লোক চিত হয়ে শুয়ে আছে আর অপর একটি লোকলোহার একটি করাত দিয়ে তারমুখের এক পাশের চোয়াল চিরছে। এক পাশ চিরে যখন অন্য পাশে চিরতে যাচ্ছে তখন পূর্বের চিরা অংশ জোড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে অনবরত উলট-পালট করে তাকে চিরছে।
আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! এই ব্যক্তি কে ? আমাকে বলা হলো আরো সামনে চলো।
আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি চুল্লি দেখতে পেলাম। চুল্লির মাঝে খুব হৈ চৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। চুল্লিতে ঊঁকি মেরে দেখতে পেলাম তাতে উলংগ কিছু নারীপুরুষ রয়েছে। আগুনের লাভা যখন তাদের তলদেশ থেকে উদগীরণ করে তখন তারা চিৎকার করে উঠে, আর দেখলাম সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে অসহনীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা ? আমাকে বলা হল আরও সম্মুখে অগ্রসর হও।
সামনে অগ্রসর হয়ে একটি নহর পেলাম। যার পানি রক্তের ন্যায় লালবর্ণের।এ পানিতে একটি লোক সাঁতারকাটছিল। অপর একটি লোক অনেকগুলো পাথর নিয়ে নদীর কিনারে দাঁড়ানো। সাঁতারুলোকটি সাঁতরিয়ে যখন নদীর কিনারে আসে তখন তার মুখ খুলে দেয় এবং কিনারায় লোকটি তার মুখে একটি পাথরঢুকিয়ে দেয়। এমনটা হচ্ছিল বারবার। আমি জানতে চাইলাম, এই লোকটি কে ? আমাকে বলা হল , আরোও সামনে অগ্রসর হও।
সামনে গিয়ে অত্যন্ত কদাকার একটি লোকের সাক্ষাৎ পেলাম। তার নিকট আগুন ছিল এবং সে আগুন প্রজ্জ্বলিত করছিল এবং চতুর্পাশে চক্কর কাটছিল।আমি জানতে চাইলাম এই লোকটি কে ? জবাব এলো আরো সামনে অগ্রসর হও।
আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি শ্যামল উদ্যানে উপস্থিত হলাম।উদ্যানের মধ্যবর্তী স্থানে এত দীর্ঘকায় একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম যে উচ্চতার কারণে তার শির আমাদের নজরে আসছিল না।আর এই দীর্ঘ লোকটির পাশে অনেকগুলো শিশুর সমাগম। আমি ইতোপূর্বে এই শিশুদেরকে কখনো দেখিনি। আমি জিজ্ঞেস করলাম এই সকললোক কারা ? উত্তর এল আরো সামনে অগ্রসর হও।
অতঃপর আমরা দৃষ্টিনন্দন মনোরম একটি উদ্যানে প্রবেশ করলাম। এত নন্দিত উদ্যান আমি এর আগে কখনো দেখিনি।আমি আমার সঙ্গীটির নির্দেশে ভিতরেপ্রবেশ করলাম। ভেতরে দেখি স্বর্ণ রূপার নির্মিত একটি শহর।আমরা শহরের প্রধান ফটকের নিকট এলাম। আমাদের জন্য ফটক খোলা হল। অতঃপর ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ করার পর আমাদের সামনে কিছু লোক এল যাদের দেহের অর্ধাংশ অত্যন্ত সুন্দর কিন্তু অপরাংশ অত্যন্ত কদাকার। আমার সঙ্গীটি তাদেরকে বলল, তোমরা সামনের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়। তারা যেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নদীটি ছিল খুবই প্রশস্ত, দুধের ন্যায় শুভ্র ছিল এর জলরাশি। তারা নদী থেকে উঠে আসার পর তাদের দেহের বিকৃতি দুরীভূত হয়ে গেল। সর্বাংগ রূপ ধারণ করল সৌন্দর্য্যের দ্যুতিতে। আমার সঙ্গীটি আমাকে বলল – এটি হল ‘আদন জান্নাত’। এটিই তোমার মূল নিকুঞ্জ। আমি দৃষ্টি উঠালাম। দেখি একটি শুভ্র বর্ণের মহল। সঙ্গীটি বলল, এটিও তোমার নীড়। আমি বললাম, আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুক। আমাকে আমার নিলয়ে একটু প্রবেশ করতে দাও। সে বলল-এখন নহে। তবে তুমি অবশ্যইএই মহলে প্রবেশ করবে।
এরপর আমি প্রথম থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু দেখলাম এর রহস্য জানতে চাইলাম। সে বলল-
প্রথম যে ব্যক্তি যার মাথা চূর্ণ হতে দেখেছ সে হলো কোরআনের জ্ঞান অর্জনকারী ওই ব্যক্তি যে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করে ভুলেও গিয়েছে এবং ফরয নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার সাথে এমন আচরণ কিয়ামতপর্যন্ত করা হবে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি যার মুখমন্ডল চিরতে দেখেছ সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে ঘরথেকে বের হয় এবং দিনভর মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। তার সাথেও কিয়ামত পর্যন্ত এমন আচরণ করা হবে।
তৃতীয়, চুল্লির ভিতর উলংগনারী পুরুষ জ্বলতে দেখেছ,এরা হল ব্যভীচারী নারী পুরুষ।
চতুর্থ দৃশ্যটি হল সুদ ভক্ষণকারীর যাকে তুমি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটতে দেখেছ।
পঞ্চম, যাকে আগুন প্রজ্জ্বলিত করতে দেখেছ সে হল জাহান্নামের ভারপ্রাপ্ত ফেরেশতা।
ষষ্ঠ উদ্যানের দীর্ঘ লোকটি হল, হযরত ইব্রাহীম(আ) । আর আশেপাশের শিশুরা হল ইসলামের মৃত্যু বরণকারী শিশু।
সপ্তম, শ্রেণীর লোক হল পুণ্য অর্জনকারী ওই সকল লোক যারা পুণ্যের পাশাপাশি কিছু পাপের ও মিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলেছে। কিন্তু অবশেষে আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে এবং মন্দের অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর এই সাথীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলল, আমি হলাম জিবরাঈল(আ) এবং সে মিকাঈল(আ)।
(বুখারি, বায়হাকি)
আলোচনাঃ
উলামাগণ বলেন- এই হাদীসটি কবরের আযাবের সত্যতার ব্যাপারে একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। কেননা নবীদের স্বপ্ন সত্য হয়ে থাকে। হাদীসে বলা হয়েছে যে তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এ ধরনের আচরণ করাহবে। এ থেকে বোঝা যায় যে, এটি বরযখ জগতের ঘটনা।
হযরত আলী(রা) বলেন – বর্ণিত ঘটনায় আরো আতিরিক্ত আছে যে,অগ্নি প্রজ্বলনকারী ব্যক্তিটি জাহান্নামের কর্তা। যখন কোনো বস্তু আগুনের সীমানা থেকে বেরিয়ে পড়ে তৎক্ষনাৎ সে ওটিকে আগুনে ফিরিয়ে দেয়। আর উলংগ নারী-পুরুষেরা হল ব্যভিচারী। আর দুর্গন্ধ যা ছড়াচ্ছে তা তাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত।অপর আরেকটি দল এমন দেখা গেছে যে, তাদের মল দ্বার দিয়ে আগুন প্রবেশ করে মুখদিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। এরাহল – সমকামী পুরুষ। আর দুধের ন্যায় সাদা নদীটি হল হাউসে কাউসার।

মৃত্যুর বিভীষিকা -২ : একজন মুমিন বান্দা ও একজনকাফিরের মৃত্যু

                            بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 

 হযরত আনাস (রা), হযরত তামীম দারী (রা) এর রেওয়ায়েতে বলেন, রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ তায়ালা মালাকুল মউতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বন্ধুর কাছে যাও এবং তাকেনিয়ে এসো। আমি তাকে সুখ দুঃখ দিয়ে ঐ জায়গাতেই পেয়েছি যেখানে আমার সন্তুষ্টি ছিল। অর্থাৎ সে ঈমানের উপর অটল ছিল। এবার তুমি তাকে আমার নিকটে নিয়ে এসো, যাতে আমিতাকে দুনিয়ার দুঃখ যাতনা থেকে মুক্তি দিতে পারি।a
নির্দেশ পেয়ে মালাকুল মাউত পাঁচশত ফেরেশতার বিশাল বাহিনী নিয়ে তার কাছে যায়। ফিরিশতাদের নিকট জান্নাতের সুগন্ধি ও কাপড় থাকে, হাতে থাকে ফুলের সাজানো তোড়া এবং শুভ্র বর্নের রেশমি পরিধেয়। বস্ত্রগুলোতে মেশকের সুগন্ধি ছড়ানো থাকে। এভাবে সুসজ্জিত হয়ে মালাকুল মউত ঐ বান্দার সামনে এসে বসে যায়। অপরদিকে সাথের ফিরিশতারা তাকে ঘিরে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে,তাদের প্রত্যেকের হাত মুমিনের কোন না কোনো অঙ্গে জড়িয়ে থাকে। অতঃপর তাদের সাথে নিয়ে আসা শুভ্র রেশমি বস্ত্রটি তার থুতনির নিচে বিছিয়ে দেয়া হয়।এরপর তার দৃষ্টির সামনে জান্নাতেরএকটি দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, এই সময় জান্নাতের মূল্যবান বস্তুগুলো যেমন হুর, পোশাক এবং রকমারি ফল দিয়েতাকে প্রলোভন দেখানো হয়। প্রলোভনটি এমন হয় ঠিক যেমন অবুঝ শিশু কান্নাকাটি করলে তার অভিভাবকরা তাকে খেলনার বস্তু দেখায়। জান্নাতে তার সহধর্মিনিরা তখন খুবই পুলকিত থাকে, এ দৃশ্য দেখে মুমিন বান্দার আত্মা তখন লফিয়ে উঠে।
মালাকূল মউত তখন বলে- হে পবিত্র আত্মা ! তুমি বের হয়ে আস কাঁটা বিহীন বদরিকা বৃক্ষে, কাঁদি কাঁদি কলায়। দীর্ঘ ছায়ায়, প্রবাহিত পানিতে ও প্রচুর ফল মূলে। রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এও ফরমান যেমালাকুল মউত তখন ঐ মুমিন বান্দার সাথে তার মা বাবার চাইতেও কোমল আচরণ করেন। কেননা সে জানে যে এই আত্মা আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই প্রিয় ও সম্মানী। তাই সেও এই বান্দার সাথে কোমল আচরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। সে নেক বান্দার আত্মা এত সহজে বের করে নিয়ে সে যে, যেন আটার মধ্য থেকে নিক্ষিপ্ত পশম বের করে নিয়ে আসে। অবশেষে আত্মা যখন বের হয়ে আসে তখন চতুর্দিক থেকে ফেরেশতরা এই বলে চিৎকার করে উঠে যে, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তুমি তোমার নেক আমলের কল্যাণে জান্নাতে প্রবেশ করে নাও। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
“ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র অবস্থায়, ফিরিশতারা বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক”। (সূরা নাহল-৩২)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, “যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয় , তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবংনিয়ামত ভরা উদ্যান”। (সূরা ওয়াকেয়া-৮৮-৮৯)
মালাকুম মউত যখন আত্মা কবজ করে নেন, তখন আত্মা দেহকে বলে, হে দেহ ! আল্লাহ তোমাকে সুপ্রতিদান দিক। তুমি আমার সঙ্গী হয়ে আল্লাহর আনুগত্যে অগ্রগামী ছিলে।আর আল্লাহর অবাধ্যে ছিলে খুবই পশ্চাৎপদ। তুমি আমার পক্ষ থেকে মুবারকবাদ গ্রহণ কর।
কেননা আজ তুমি নিজেও মুক্তি পেয়েছো আর আমাকেও নাজাত দিয়েছ। এভাবে দেহও আত্মাকে মুবারকবাদ দেয়। মুমিন বান্দার মৃত্যুতে যমীনের যে সকল অংশে সে ইবাদত করত সেগুলো কাঁদতে থাকে। আকাশের যে সকল দুয়ার দিয়ে তার নেক আমল উপরে উঠত সে সকল দুয়ার তার জন্যে কাঁদতে থাকে। যে দরজা দিয়ে তার রিযিক নেমে আসত সে দরজাও কাঁদতেথাকে। আকাশ যমীনের এ ক্রন্দন দীর্ঘ চল্লিশ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
মালাকুল মউত যখন তার আত্মা কবজ করে নেয় তখন তার দেহের হেফাযতের জন্যে সেখানে পাঁচশত ফেরেশতা দাঁড়িয়ে থাকে। যদি কেউ তার লাশের পাশ ফিরাতে চায় তখন ফিরিশতারাও এ কাজে মানুষের সহযোগিতা করে। এমনকি কাফন পরিধান ও সুগন্ধি মাখানোর কাজেও ফিরিশতারা অংশ নেয়। লাশের সম্মানার্থে ফিরিশতারা দুটি সারি করে ঘর থেকে কবর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়। জানাযা যখন অতিক্রম করে তখন তারা অভ্যর্থনা জানায়। তার জন্যে ক্ষমার প্রার্থনা করে। মুমিনের মর্যাদার এ অবস্থা দেখে ইবলিশ এত জোরে চিৎকার করে উঠে যে, তার দেহের হাড়ের কোন কোন গ্রন্থির বন্ধন এ সময় ছিঁড়ে যায়। সে আক্ষেপের সাথে তার সঙ্গীদের বলতে থাকে তোমাদের সর্বনাশ হোক। এই বান্দা তোমাদের ফাঁদ থেকে কিভাবে ফসকে গেল। ইবলিশের সঙ্গীরা বলে, এ নিষ্পাপ ছিল তাই আমাদের ফাঁদে আটকায়নি।
মালাকুল মউত যখন তার আত্মাকে নিয়ে আকাশে আরোহন করে তখন হযরত জিবরাইল (আ) সত্তর হাজার ফিরিশিতা নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। আর সকল ফিরিশতারা তার নিকট আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির সুসংবাদ জানাতে থাকে। মালাকুল মউত যখন আত্মাটিকে নিয়ে আরশের নিকট পৌঁছেন তখন সেআল্লাহ তায়ালার সামনে সিজদায় পতিত হয় যায়। আর সে সময় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মালাকুল মউত ! তুমি আমার বান্দাকেনিয়ে জান্নাতের বাগানে রেখে এস। অতঃপর তাকে কবরেরাখার পর নামায তার ডান দিকে এবং রোযা তার বামদিকে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আল্লাহর যিকর ও কুরআন তিলাওয়াত এসে দাঁড়িয়ে যায় তার শিথানের দিকে। পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে যায় জামাতের সাথে নামায পড়ার জন্য মসজিদের দিকে গমন। আর তারধৈর্য্য কবরের এক কোনায় অবস্থান নেয়। এ সময় আল্লাহ তায়ালা তার কবরে আযাবের একটি অংশ প্রেরণ করেন। আযাবটি এসে কবরে ডানদিকে থেকে প্রবেশ করতে চায়।
কিন্তু নামায তাকে বাধা দিয়ে বলে- আযাব তুমি পিছিয়ে যাও। খোদার কসম ! এই বান্দাটি সারা জীবন কষ্টে ছিল। কবরে আসার পর তার কিছুটা আরাম মিলেছে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, আযাবতখন ডান দিকে থেকে সরে বাম দিকে যায়। বাম দিকে রোযা নামাযের মত আযাবকে জবাব দিয়ে প্রতিহত করে।আযাব এবার মাথার দিক থেকে আসতে চেষ্টা করলেও একই রকম জবাব আসে। মোট কথা আযাব যেদিক থেকেই আসতে চায় সেদিক থেকেই তারজন্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
অবশেষে আযাব যখন দেখে আল্লাহর এই নেক বান্দার আমল সব দিক থেকেই তার জন্যে প্রতিরক্ষার দেয়ালসৃষ্টি করে রেখেছে তখন সেফিরে যায়। আর সে সময় ‘সবর’উঠে নেক আমল সমূহকে বলতে থাকে, এই আযাবের প্রতিরক্ষায় আমি এজন্যে আসিনি যে মূলত তোমাদের শক্তির পরিমাণ দেখা আমার উ
তোমরা যদি তাকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হতে তাহলে আমি অবশ্যই এসে এই বান্দাকে আযাব থেকে রক্ষা করতাম। তোমরাই যখন যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ালে তখন আমি এই বান্দার জন্যে অতিরিক্ত সঞ্চয় হয়ে রয়ে গেলাম। পুলসিরাত আর মিযানে আমি তার কাজে আসব।
এরপর ঐ বান্দার নিকট এমন দুজন ফিরিশতা আসে যাদের চোখ নীল বর্ণের। আওয়াজ ভয়ংকর। গরুর শিংগের ন্যায় দাঁত এবং তাদের শ্বাসের সাথে নাসা রন্ধ্র দিয়ে অগ্নি শিখা বের হয়। ফিরিশতাদ্বয়ের উভয় কাঁধের মধ্যবর্তীস্থান খুবই প্রশস্ত। তারা মুমিন বান্দা ছাড়া আর কারো উপর দয়া করতে জানে না। এই দুজন ফিরিশতাদেরকেই মুনকার নাকির বলা হয়। ওদের হাতে একটি হাতুড়ি থাকে। এটি এতই ভারি যে সকল মানব-দানব মিলে একত্রিত হলেও তা উত্তোলন করতে সক্ষম হবে না। এ দুজন ফিরিশতা কবরে প্রবেশ করে লাশকে বলে উঠেবসো। লাশ তৎক্ষণাৎ উঠে বসে যায় এবং কাফনের কাপড় খুলে পড়ে যায়।
ফিরিশতা তখন জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রভূ কে?
তোমার ধর্ম কি ?
এবং তোমার নবী কে?
জবাবে সে বলে, আমার রব হলেন আল্লাহ যার কোন অংশীদার নেই। আমার ধর্ম ইসলাম। আর হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন আমার নবী। তারপর আর কোন নবীর আগমন হবে না।
ফিরিশতা জবাব শুনে বলেন, তুমি সত্য বলেছ। অতপর কবরকে চারদিকে থেকে প্রশস্ত করে বলেন , তুমি উপরের একটু দিকে তাকিয়ে দেখ। সে উপরে তাকায়। তখন আকাশের শেষ সীমানাতক তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। ফিরিশতারা বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু ! এটা তোমার অবস্থানের ঠিকানা।আল্লাহর আনুগত্যের বিনিময়ে তুমি এটা পেয়েছ।
বর্ণনার এই পর্যায়ে এসে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেন, ওই সত্তার কসম যার মুঠোয় আমার প্রাণ। মুমিন বান্দার তখন এতই আনন্দ অনুভূত হয় যা কখনো শেষ হবার নয়। অতঃপর ঐ বান্দাকে আবার নির্দেশ দিয়ে বলা হয় যে, তুমি নিচের দিকে দেখ। নিচের দিকে যখন সে তাকায় তখন দোযখের শেষ সীমানা পর্যন্ত তার দৃষ্টির গোচরে চলে আসে। ফিরিশতা তখন তাকে বলে, হে আল্লাহরপ্রিয় পাত্র ! এই ভয়াবহ নরক থেকে তুমি নাযাত পেয়েছ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন,ওই বান্দার এ সময় এমন পুলকানুভূতি অর্জিত হয় যা কখনো সমাপ্ত হবার নয়। অতঃপর স্বর্গের সাতাত্তরটি দরজা তার জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এসব দুয়ার দিয়ে জান্নাতের সৌরভ এবং সুশীতল সমীরণ তার কবরে পৌঁছতে থাকে এবং ততদিন পৌঁছতে থাকবে যতদিন সে কবরে থাকবে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলোচনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বলেন, এরপর আল্লাহ তায়ালা মালাকুল মউতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার দুশমনের নিকট যাও এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি প্রাচুর্য্যের সাথে তাকে রুযি দিয়েছি। সীমাহীন নিয়ামতের বারিপাত করেছি তার উপর। কিন্তু সে আমার সাথে শুধুঅবাধ্যতাই করে ফিরেছে। এবার এই দুশমনকে আমার কাছে হাজির করো।
মালাকুল মউত আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে এমন কদাকার বেশে ঐ বান্দার নিকট আগমনকরে যে, কেউ কোনো দিন এমন আকৃতি দেখেনি। তার বারটি চোখ থাকে। তার কাছে এমন একটি লৌহ শলাকা থাকে যা শাখা ও কাঁটা বিশিষ্ট। মালাকুল মউতের সাথে আরো পাঁচশত ফিরিশতা থাকে। এদের প্রত্যেকের সাথেই থাকে জাহান্নাম থেকে নিয়ে আসা আগুনের চাবুক। মালাকুল মউত অবাধ্য বান্দাকে চাবুক দিয়ে এমনভাবে আঘাত করে যে, প্রতিটি কাঁটা তার সারা দেহে তন্ত্রের মূলে বিদ্ধ হয়ে যায়। অতঃপর সেটি পাকিয়ে টেনে বের করেএবং তার পায়ের নখের তলদেশথেকে পর্যন্ত আত্মাকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর সেই লৌহ শলাকাটি তার উভয় পায়ের গোড়ালিতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তখন আল্লাহর এই দুশমনের এতই কষ্ট হয় যে , বেদনায় সে কাতরাতে থাকে। এমন সময় বাকি ফিরিশতারা তাদের হাতের চাবুক দিয়ে তার মুখমন্ডল এবং পশ্চাৎদেশে অনবরত প্রহারকরতে থাকে। এ সময় তার আত্মাকে টেনে সারা দেহ থেকে গোড়ালিতে নিয়ে আসা হয়। শাস্তির এই পর্যায়ে শলাকাটি তার হাঁটুতে ফোটানো হয়। তখন বেদনায় সেছটফট করতে থাকে। এমন সময় ফিরিশতারা আবার আগুনের চাবুক দিয়ে তার মুখ ও নিতম্বে মারতে শুরু করে। হাঁটু থেকে শলাকাটি বের করে ঢুকানো হয় তার নিতম্বদেশে। অতঃপর বুকে এবং সব শেষে কন্ঠনালীতে, তারপর পূর্বের মতই সেটিকে টেনে বের করা হয়। এরপর ফিরিশতারা জাহান্নাম থেকে সংগ্রহ করা অঙ্গার তার থুতনীর নিচে বিছিয়ে দিয়ে বলে, হে অপবিত্র আত্মা ! তুমি বেরিয়ে আস।
“তুমি থাকবে প্রখর বাষ্পে, উত্তপ্ত পানিতে, এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়।যা শীতল নয় এবং আরামদায়কওনয়”। (সূরা ওয়াকেয়া ৪২-৪৪)
(মুসনাদে আবি ইয়ালা, ইবন আবি দুনিয়া থেকে সংগৃহিত)
দ্দেশ্য ছিল।

মৃত্যুর বিভীষিকা -১

                              بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم 

মৃত্যু যন্ত্রনার বিবরণ
 
১ . হযরত আয়েশা (রা) রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু যন্ত্রণার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশে  চামড়া অথবা লাকরির একটি ছোট্ট পানি ভর্তি পাত্র ছিল। তিনি প্রায়ই তাঁর হস্তদ্বয় এই পাত্র থেকে ভিজিয়ে মুখমণ্ডল মুছিয়ে দিতেন আর বলতেন, লা ইলাহাইল্লাল্লাহ ! মৃত্যু যন্ত্রণা বড়ই কঠোর। – (বুখারি)
 
২ . হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন, যখন থেকে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু যন্ত্রণার তীব্রতা অবলোকন করেছি তখন থেকে কারও সহজ মৃত্যুর কথা শুনলে আমার ঈর্ষা সৃষ্টি হয় না। – (তিরমিযি)
 
৩ . হযরত আয়েশা (রা) আরোও বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু যন্ত্রণার কঠোরতা দেখার পর থেকে মৃত্যু
যন্ত্রণার তীব্র কষ্ট আমার কাছে কোনো খারাপ বিষয় বলে মনে হয় না।- (বুখারি)

৪ . হযরত সাবেত (রা) রেওয়াত করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তীব্র মৃত্যু কষ্টে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বলছিলেন,
অন্য কোনো বিষয়ের জন্য নয়, মানুষ যদি কেবল মৃত্যু যন্ত্রণার কথা ভেবে আমল করে তাহলেই তার জন্য যথেষ্ট। (যাওয়ায়েদেযুহদ)

৫ . লোকমান হানাফী এবং ইউসুফ ইবন ইয়াকুব (রাহ) বর্ণনা করেন, হযরত ইয়াকুব(আ) এর নিকট যখন তার হারানো পুত্রের
সন্ধানের সুসংবাদ এল তখন তিনি সুসংবাদ দাতাকে বললেন, তুমি এতই ভালো সংবাদ নিয়ে এসেছো যে, তোমাকে যদি এর জন্য পুরষ্কার দিতে হয় তাহলে সেটা হল, আমি তোমার জন্য এই দোয়া করব যেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ করে দেন।
৬ . হযরত ইবন মাসউদ (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, মুমিনের আত্মা তার ঘামের সাথে বের হয়ে যায়। আর গাধাকে যেভাবে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঠিকতেমনি কাফিরের আত্মা টেনে বের করা হয়। মুমিন যে পাপগুলো করে ফেলে সেগুলোর প্রায়শ্চিত্ত তার মৃত্যু যন্ত্রণার মাধ্যমে হয়ে যায়। আর কাফির যে পুণ্য কাজগুলো করে সেগুলোর বিনিময় এভাবে দেয়া হয় যে, তার জন্যে মৃত্যু সহজ করে দেয়া হয়। – (তিবরানী কাবির, আবু নায়ীম)

৭ . হযরত আয়েশা (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন,মুমিনের প্রতিটি বিষয়ের মাঝে শুধু বিনিময় আর বিনিময় রয়েছে। এমনকি তার মৃত্যু যন্ত্রণার মাঝেও সে প্রতিদান পেয়ে থাকে।- (ইবন মাজাহ )

৮ . হযরত বুরায়দা (রা) এর রেওয়ায়েতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন,মুমিন ললাটের ঘাম ছেড়ে মৃত্যু বরণ করে। – (তিরমিযি, ইবন মাজাহ, বায়হাকি)

৯ . হযরত আলকামা ইবন কায়েস বর্ণনা করে, তিনি তার চাচাত ভাইয়ের মৃত্যু মুহুর্তে তাকে দেখতে গেলেন এবং কপালে হাত রাখলেন, দেখতে পেলেন তার কপাল ঘর্মাক্ত। আলকামা তখন বললেন, আল্লাহু আকবার! হযরত ইবন মাসউদ (রা) রেওয়ায়েত করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন,মৃত্যুর সময় মুমিনের ললাট দেশ ঘেমে যায়। নবীজীরাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর বলেন, প্রতিটা মুমিন থেকেকিছু না কিছু গুনাহ রয়েই যায় এবং এগুলোর বদলা সে পেয়ে  থাকে। এরপরও যদি তার পাপ অবশিষ্ট থাকে তাহলে এর বদলা এভাবে দেওয়া হয় যে, মৃত্যুর সময়তাকে অধিক কষ্ট দেওয়া হয়।একথাগুলো বর্ণনা করার পর আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা) বলেন, গাধার মত মরতে আমি পছন্দ করি না। -(বায়হাকি, ঈমান অধ্যায়)
১০. হযরত সায়েদ ইবন আসলাম(রা) রেওয়ায়েত করেন যে, মুমিনের পুণ্য কর্ম যখন সমাপ্ত হয়ে যায় আর পাপের কিছু অংশ যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে মৃত্যুকে তার জন্যে কঠোর করে দেওয়া হয় যাতে পাপগুলোর মোচন হয়ে যায়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর কাফের যদিদুনিয়াতে কোনো পুণ্য কর্ম করে ফেলে তাহলে এর বিনিময়ে তার মৃত্যু সহজ করে দেওয়া হয়। অতঃপর কুফুরির পরিণতি হিসেবে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েদেওয়া হয়। – (ইবন আবি দুনিয়া)