بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم
ভূমিকা : সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রে মুমিন সর্বাধিক সতর্ক
হবে। যথাসম্ভব নির্ভূলভাবে ছালাত সম্পাদন করতে সচেষ্ট হবে।ছালাতের ফরয,
ওয়াজিব, সুন্নাত এবং ছালাতের পূর্বাপর বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিশুদ্ধভাবে
পালন করবে। তার ছালাত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
ছালাতের সাথে মিলছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি?
বর্তমানে মুসলমানদের ছালাতের অবস্থা দেখলে মনে হয়না যেতারা ছালাতের মত
শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি আদায় করছেন না কিকরছেন? দেখা যায় অধিকাংশ লোকের ছালাত
বিভিন্ন ধরণের ভুলে ভরা।
আমরা নিম্নে এমন কিছু ভুল-ত্রুটির উল্লেখ করছি যেগুলো মুছল্লীদের মধ্যে দেখা যায়; অথচ তা থেকে সতর্ক থাকা সকলের জন্য জরুরী।
১
) তাড়াহুড়া করে ওযু করাঃ নামায ধরার জন্য তাড়াহুড়া করে ওযু করার কারণে
অনেক সময় কোন কোন স্থানে পানি পৌঁছে না। শুকনা রয়ে যায় বিভিন্ন অঙ্গের কোন
কোন স্থান। অথচ কোন স্থান শুকনা থেকেগেলে সেই ওযু দিয়ে ছালাত বিশুদ্ধ হবে
না।
২ ) পেশাব ও পায়খানার চাপ রেখে ছালাত আদায় করাঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দুটি নাপাক বস্তুর (পেশাব-পায়খানা) চাপ থাকলে ছালাত হবে না। (মুসলিম)
৩
) দ্রুততার সাথে দৌড়িয়ে নামাযে শরীক হওয়াঃ অনেকে ইমামের সাথেতাকবীরে
তাহরীমা পাওয়ার জন্য বা রুকু পাওয়ার জন্যদৌড়িয়ে বা দ্রুত হেঁটে ছালাতে
শামীল হয়। অথচ এটানিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
“যখন নামাযের ইকামত প্রদান করা হয় তখন
তাড়াহুড়া করে নামাযের দিকে আসবে না। বরং ধীর-স্থীর এবং প্রশান্তির সাথে
হেঁটে হেঁটে আগমণ করবে। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে তা আদায় করবে। আর যা
ছুটে যাবে তা (ইমামের সালামের পর) পূর্ণ করে নিবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
৪
) জায়নামায পাক করার জন্য দুয়া পাঠ করাঃ ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু … বলে
জায়নামায পাক করার জন্য দুয়া পাঠ করা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা জায়নামায
পবিত্র থাকলে দুয়া না পড়লেও ছালাত হবে।আর জায়নামায নাপাক থাকলে হাজার দুয়া
পড়লেও তা পাক হবে না। তাছাড়া এঅবস্থায় দুয়া পাঠ করা নবীজীর ছালাতের
পদ্ধতীতে প্রমাণিত নয়।
৫ ) ছালাত শুরুর সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ করাঃ
নাওয়াইতু আন… বলে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা আরেকটি বিদআত। কেননা এর পক্ষে কোন
ছহীহ হাদীছ তো দূরের কথা কোন যঈফ হাদীছওপাওয়া যায় না। এ ভাবে নিয়ত না
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না ছাহাবায়ে কেরাম না
তাবেঈন না তাবে-তাবেঈন না চার ইমামের কেহ করেছেন। এটা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির
তৈরী করা প্রথা। তার সাথেইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।সুতরাং তা বর্জন করা
প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরয। নিয়ত শব্দের অর্থ-ইচ্ছা বা সঙ্কল্প করা। আর তা
অন্তরে হয় মুখে নয়। সুতরাং কোন কিছুকরার জন্য অন্তরে ইচ্ছা বা সঙ্কল্প
করলেই সে কাজের নিয়ত হয়ে গেল। তা মুখে বলতে হবে না।
৬ ) নাভীর নীচে হাত
বাঁধাঃ এক্ষেত্রে আহমাদ ও আবু দাঊদ বর্ণিত হাদীছটি দলীল হিসেবে পেশ করা হয়।
আলী (রাঃ) বলেন, সুন্নাত হচ্ছে ছালাতে ডানহাতকে বাম হাতের উপর রেখেনাভীর
নীচে রাখা। কিন্তু হাদীছটির সনদ দুর্বল, তাই উহা আমলযোগ্য নয়। তার বিপরীতে
ছহীহ হাদীছ হচ্ছেডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখা। (হাদীছটি
ওয়ায়েল বিন হুজর(রাঃ) এর বরাতে আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে।)
৭ ) সিজদার
স্থানে দৃষ্টিপাত না করাঃ আকাশের দিকে বা অন্য দিকেদৃষ্টিপাত করার ফলে
ছালাতে ভুল হয়ে যায় এবং মনের মাঝে নানান কথার সৃষ্টি হয়। অথচ দৃষ্টি নতরাখা
এবং সার্বক্ষণিক দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখার জন্য নির্দেশ রয়েছে। তবে
তাশাহুদ অবস্থায় ডান হাতের তর্জনীখাড়া রেখে তা নাড়াতে হবে এবং তার প্রতি
দৃষ্টি রাখতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কি হয়েছে
কিছু লোকের, তারা ছালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে? তারপর তিনি
কঠোর শব্দ ব্যবহার করে বলেন, “তারা এথেকে বিরত হবে; অন্যথা তাদের দৃষ্টি
শক্তি ছিনিয়ে নেয়াহবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ছালাত অবস্থায় ডানে-বামে
দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা
হলে তিনি বলেন, “এটা হচ্ছে বান্দার ছালাত থেকেকিছু অংশ শয়তানের ছিনিয়ে
নেয়া।” (বুখারী)
৮ ) তাকবীর, কুরআন তেলাওয়াত ও ছালাতের অন্যান্য দুয়ার
সময় ঠোঁট না নড়িয়ে শুধু মনে মনে বলাঃ এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল। ইমাম নববী
বলেন, ইমাম ছাড়া অন্যসবার জন্য সুন্নাত হচ্ছে সবকিছু চুপে চুপে পাঠ করা।
চুপে চুপে বলার সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে নিজেকে শোনানো- যদি তার শ্রবণ শক্তি
ঠিক থাকে এবংকথায় কোন জড়তা না থাকে। এ বিধান সকল ক্ষেত্রে ক্বিরাত পাঠ,
তাকবীর, রুকুসিজদার তাসবীহ্ প্রভৃতি। তাছাড়া ঠোঁট না নাড়ালে তো তাকে পড়া
বলা চলেনা। কারণ আরবীতে এমন অনেক অক্ষর আছে ঠোঁট না নাড়ালে যার উচ্চারণই
হবে না।
৯ ) ছানা এবং আঊযুবিল্লাহ্ পাঠ নাকরে সরাসরি বিসমিল্লাহ্ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। ছানা ও আঊযুবিল্লাহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব।
১০
) সূরা ফাতিহা পাঠ না করাঃ বিশেষ করে ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করার সময়
সূরা ফাতিহা অনেকে পড়ে না। অথচ সুরা ফতিহা ছাড়া ছালাত হয় না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি এমন ছালাত পড়ল যাতে
সূরা ফাতিহা পড়ে নাইসে ছালাত ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ তথা
অসম্পূর্ণ। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত শেষে
মুছল্লীদের বললেন, তোমরা কি ইমামের পিছে পিছে কিছু পাঠ কর? আমরা বললাম,
হাঁ, দ্রুত করে পড়েনেই। তিনি বললেন, এরূপ করোনা। তবে সূরা ফাতিহা পড়ে নিও।
কেননা যে ব্যক্তি এ সূরা পড়বে না তার ছালাত হবে না। (আবু দাঊদ, তিরমিযী) لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ
وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُفَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا
وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا