Wednesday 25 April 2012

প্রাণময় হোক প্রতিটি মসজিদ |রোকন রাইয়ান

http://www.banglanews24.com/images/imgAll/2011December/SM/masjid20111229155006.jpg
নিউইয়র্ক-এর একটি মসজিদে তাবলিগ জামাতের এক মুরব্বিকে বসে বসে ঘুমাতেদেখে অবাক হয়েছিলেন এক আমেরিকান। বিস্ময় চাপা দিতে না পেরে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি বসে বসে কি করে ঘুমাচ্ছেন! আমাদের তো ঘুমের ওষুধের পেছনে কারি কারি টাকা খরচ করেও নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। মুরুব্বি সহজ সুলভতায় উত্তর দিয়েছিলেন, মসজিদ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিময় জায়গা। এখানে বসে থাকলে আপনারও এমনিতেই ঘুম চলে আসবে। ঘটনা বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত ওই বন্ধুর কাছে জানতে পারি পরে ওই আমেরিকান ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত মসজিদে আসতে শুরু করেন। মানতে কষ্ট হলেও আজব ব্যাপার, যে লোকটি এতদিন ঘুমের ওষুধ খেয়েও প্রতি রাতে নির্ঘুম কাটাতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই তিনিই নিয়মিত মসজিদে আসার ফলে শান্তিময় জীবন-যাপন শুরু করেন।
মসজিদ শান্তিময় স্থান। এটি তার ছোট্ট উদাহরণ। এ কথা ঐতিহাসিকভাবেই স্বীকৃত, শান্তি ও কল্যাণের আধার মসজিদ। যে কারণে রাসূল আকরাম সা. এর জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রব্যবস্থা সবকিছু পরিচালিত হত এই মসজিদ থেকেই। মসজিদই ছিল রাসূল সা. এর সকল কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল। মসজিদ থেকে পরিচালিত হত রাষ্ট্রসভা, দাওয়াতি কার্যক্রম, দীনি তালিম, বিয়ে পড়ানো ইত্যাদি। কারো রিজিকের অভাব থাকলে চলে আসতেন মসজিদে। কেউ বা অবসর কাটাতে চলে আসতেন মসজিদে।এভাবেই মসজিদকে প্রাণবন্ত রাখতেন সাহাবাগণ। আরব রাষ্ট্রগুলোতে এর ধারাবাহিকতা ছিন্ন হলেও এখনো এর ছিটেফোটা কিছুটা লক্ষ্য করা যায়। তবে বাংলাদেশের মসজিদগুলো এর ব্যতিক্রম। এখানে লোক সমাগম নেই বললেই চলে। ওয়াক্তিয়া নামাজে দুই কাতার ছাড়া বাকিটা গড়ের মাঠ। যারা নিয়মিত নামাজি তারাও আর বাড়তি সময় দেন নামসজিদে। মুসল্লি নেই বলে মুয়াজ্জিনও নামাজ শেষে দরজায় লাগান ইয়া বড় তালা। কেউ দেরিতে নামাজ পড়তে এলে বারান্দাই তার ভরসা।
অবশ্য মালামাল হেফাজতে এরউত্তম ব্যবহার আর নেই। আজকাল চোরের হাত সব জায়গা ঘুরে এই পবিত্র স্থানেও পড়ছে। লোভী অনেক নামাজিও দ্বিধাদ্বন্দ্বের অতলে অন্যের জুতো নিয়ে ভাগছেন।কি আশ্চর্যের কথা! নামাজটাও এখন শান্তিতে পড়া যায় না ওই জুতো ব্যাগ খোয়ানোর ভয়ে। অনেক সময় সেজদার জায়গাটা তাই চলে যায় জুতোর দখলে।
তবে তাই বলে মসজিদকে অবহেলা করা যাবে না! মসজিদ আবাদ রাখতে হবে। প্রাণবন্ত রাখতে হবে এর ভেতর-বাহির। এটা ঈমানেরই একটা দাবি। মুসলমান হিসাবে মহান কর্তব্য। কারণ মসজিদ হলো জান্নাতেরবাগিচা। এ বাগিচার হেফাজতএবং উত্তম ব্যবহার প্রতিটি মুসলিমের জন্যই সংরক্ষিত। হাদিস শরিফে মসজিদকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা এসেছে। নবি করিম সা. বলেছেন- ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগিচা দিয়ে অতিবাহিত হও তখন এর ফল খাও, অর্থাৎ তাতে তোমরা বিচরণ কর। জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূলাল্লাহ সা.! জান্নাতের বাগিচা কি? তিনি বললেন- মসজিদসমূহ।’ (মিশকাত-৭০)
নবি করিম সা. মসজিদকে জান্নাত বলেছেন। এর কারণওসুস্পষ্ট, এতে ইবাদত করার ফলে মানুষ জান্নাত লাভ করে থাকে। জাহান্নাম থেকেপায় চিরমুক্তি।
অপরদিকে সরাসরি মসজিদকে সরব ও প্রাণময় রাখার নির্দেশ এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে সে-ই, যে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছে। সুতরাং ঈমানদার হিসাবে মসজিদকে সচল সুরক্ষিত রাখা আমাদেরই কর্তব্য।
মসজিদকে আবাদ রাখতে চাইলেপ্রয়োজন মুসল্লির উপস্থিতির ব্যাপকায়ন। লোক সমাগমের বিভিন্ন দীনিকাজ। এ তালিকায় মসজিদভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ, বয়স্কদের কোরআন পাঠদান, ইসলামি জলসা, হামদ-নাতের আয়োজন, কিতাবিতালিম ইত্যাদি আসতে পারে।অবশ্য বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক কিছু কিছু মসজিদে পাঠাগার চালুআছে, তবে সেটি সক্রিয় নয়। নির্ধারিত কারো দায়িত্বে নেই বলে অচল পড়ে থাকে পাঠাগার। এ ক্ষেত্রে সুবিধা হবে মুয়াজ্জিনকে বাড়তি ফি দিয়ে নির্ধারিত সময় দেয়ার প্রতিশ্রুতি নেয়া। পাশাপাশি এলাকার মুসল্লি কিংবা কর্তৃপক্ষের সার্বিক দেখাশোনা।
মসজিদের ভেতর ছাড়া এর আশাপাশ আজকাল আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায় না। শহুরে অনেক মসজিদের পাশেই এখন দেখা যায় সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন। আবার বাজারের ব্যাপকায়নের ফলে মসজিদের আশপাশে কিংবা কোনো কোনো মসজিদের নিচ তলায় দেখা যায় মার্কেট গড়ে উঠেছে। এসব মার্কেটের প্রায় প্রতিটি দোকানে কর্তৃপক্ষের সামনেই চলছে টেলিভিশন। অশ্লীল সিডি-ভিসিডির দোকানও দেখাযায় কোনো কোনো জায়গায়। অথচ মসজিদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে দূরেরাখা বাঞ্চণীয়। কেননা হাদিস শরিফে এই মসজিদকেই জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এবং মসজিদ যে আল্লাহর ঘর এ নিয়েও মুমিনের হৃদয়ে কিঞ্চিত সন্দেহ নেই। তাহলে এই ঘরের পবিত্রতা নষ্ট করা এবং একে দুনিয়াবি অর্থ উপার্জনের উপলক্ষ বানানো আমাদের কতটা ঠিক হচ্ছে এই নিয়ে যদি কর্তৃপক্ষ সামান্যতমও ভাবতেন উপকার হতো।
সর্বোপরি কথা হলো মসজিদেএলাকার সকল মুসল্লির পদচারণ হোক। মসজিদ যেন মুসল্লিশূন্য না হয়। অবশ্য অনেকের যুক্তি, শহরে মসজিদ বেশি হওয়ায় লোক জনের উপস্থিতি কম। তবে এ যুক্তি তাদের মানার কোনো কারণ নেই যারা শবে কদর, শবে বরাত আর শুক্রবারের নামাজ পড়েন বাকখনো এই নামাজ পড়া দেখেছেন। ওই তিন নামাজের মুসল্লিদের এখন এ কথাও ভাবার সময় এসেছে, এসবের চেয়ে প্রতিদিনের ওয়াক্তিয়া নামাজের তুলনা কোনো অংশে কম নয়। বরং ফরজ নামাজের গুরুত্বই সব সময় সবার আগে। আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক বস্তুটি গ্রহণের তাওফিক দিন।





যেমন কাজ করবে/তেমনই ফল পাবে/বিশ্বাস হয়না ?তো করে করে দেখ/-/জান্নাত আছে/জাহান্নামও আছে/বিশ্বাস হয়না ?তো মরে দেখ

0 comments

Post a Comment

Thanks for comment